"রুদ্র রাগ"
১) "মৃত্যু"
ভালোবেসে দিগন্তরেখার কাছে গেলে দূরে যায়
ঘাসে শুলে মোছে বেঁচে থাকা
ঐখানে জন্ম ঐখানে মৃত্যু আসে
বহমান জলধারা আঁকাবাঁকা হাঁটু ভিজে যায়।
শহরে রাস্তায় ছিটে ফোঁটা ছায়া
তাড়াহুড়ো মানুষ বন্দী ছোট্ট দ্বীপে
নিভিয়ে দিয়ে স্বর্ণালী আলো
ডুবে মোবাইলের সুরেলা বীপে।
নেশা করি নেশার মতো খুনহীন খুনে
পাড়ায় পাড়ায় অলিগলি
অবাধ্য হাওয়া বেয়ে ছুটে
ছোটো রক্তচোষা মরে সামুদ্রিক নুনে।
এসো হে লাঠিয়াল, বন্দুকধারী
খেলে নিই দুই মুঠো
চিন্তা পঙ্গু হতে দেরি নয়
শত্রু ভাঙে বাঁশের খুঁটো।
শোক ছড়ায় দূর শহর থেকে পাড়া
খুন হয়ে যায় প্রতিনিয়ত
খুন হয়ে গেছে আজ
মুখোশ গায়ে পৃথিবী সর্বহারা।
২) "ভয়"
আবার ফিরে এসেছে ওরা বসন্ত নিয়ে
ঘোড়া ছুটিয়ে অধিকার নিয়ে কথা বলতে
গাছে ফোটা ফুলের রং পাল্টাবে না
তবুও আমরা কথা বলব ছায়া নিয়ে
ভোলা সেনের আমল অতিক্রান্ত
কম্যুনিস্ট এখন দ্বারকানগরী
আসলে কি জানো
মিশে গেলে ভয় নেই
জিতে গেলে দাস।
৩) "একটি দাবি"
বিস্ফোরণে উড়ে যায় মাথা
ছেঁড়া টুকরো টুকরো ঘাসে রক্তের দাগ
হাসপাতালে বিশ্ব প্রগতির খাতা
পাগল হয়ে যায় মানুষের রাগ।
মলমের প্রয়োজন
কলমের প্রয়োজন
প্রয়োজন কিছু মন
এবং বাতাসের বিশুদ্ধকরণ।
৪) "অবাঞ্ছিত শিশু"
মূর্ছা যাওয়ারই কথা
এভাবে নরম নমনীয় সদ্য প্রস্ফুটিত
শিশুকান্না কোমল বিছানার বিপরীতে
আরও কটা হোক
একটাই মানবিকতা এতটা নীচে নেমেছে
দুটোয় আরও নামবে
তিনটিতে একদম ছারখার করে দেবে
ফাগুনের আগুন বুকে জ্বল
শীতের ফুলকি আকাশে ওড়
দেশলাই দাবানল আন
চিতাকাঠে তোল চুপচাপ
কঠিন কান্না উঠুক তোমার জন্মে।
৫) "ফ্লাইং ড্রাগন"
কেশর পাকিয়ে বাড়ছে ধোঁয়া আকাশে
জলন্ত আগুন কিলোমিটারের মুখে
চোখ জ্বলছে
কুয়াশা নামবে ভোরে
ভালোবাসা সুপারলেটিভ ডিগ্ৰির পারদ ছুঁতে চলেছে
দু'পেয়ে ফিনিক্স হয়ে
বাড়ছে জঙ্গলের বুকে
মহাপ্রলয় সৌন্দর্য্যের পরিসংখ্যান ফারেনহাইট
ডিগ্ৰির তলায় তলিয়ে
যেতে যেতে
ফ্লাইং ড্রাগন ওড়ে কে তাকে রুখে।
৬) "সংবাদপত্র"
মারামারির পর মা বলে
সমাজে সবাই মিলেমিশে থাকতে হয় বাবা
সবাইকে একসাথে নিয়ে চলতে হয়
অত রাগগোসা করলে হয় কি?
এখন শুধু রাজনীতি, রাজনীতি, রাজনীতি
বাকিটা পরকীয়া আর সমকামী
মুখের দিকে তাকালে ফুটে ওঠে প্রেম
কোথায় প্রোপজ করব আলোয় না অন্ধকারে?
আলো মানে সমারোহ
অন্ধকার মানে একাকিত্ব
কোনটা চাও?
৭) "গোপনে প্রস্থান"
ভিক্ষা ঝুলি পূর্ণ করে শমন দিয়েছে যারা
কক্ষে স্বর্ণ জহরত পাতকে আচ্ছন্ন রেখে
অগ্নিশয্যায় খসে পড়ে বৃহৎ সংখ্যক তারা
ফেটে পড়ি ভারতবর্ষে শবাধার দেখে।
লুটিয়ে পড়েছে পদচিহ্ন পিচ ঢালা পথে
প্রভাত থেকে সন্ধ্যার অবসানে নিত্য
ছিন্নবস্ত্রার লুকানো হাটে 'বহাওয়াতে
শরীরের পর শরীর পরিবর্তনে ভৃত্য।
পথ যেন বিলাসিতা বিষাদময় বাড়ি
পরিত্যক্ত ফসিলে বেড়ে উঠে পৃথিবী
অশ্বমেধের যজ্ঞে আলো ঢেলে রবি
অন্ধকারে অজ্ঞাতে অসীম বীর নারী।
অর্থনীতির উচ্ছিষ্টে ভাগ্য দেখে লোকে
বহুরূপী বরনে গড়নে পয়সার শোকে।।
৮) "বালি চোর"
নেবেন না?
সিগারেট অফার করলে রেগে যাবেন না ত?
রাতের কালো নিকষ অন্ধকারে
জ্বলে উঠল বেইমানি
ইঞ্জিনের জোরে ভোরের পর ভোর
ফুটো হয়ে গেল ব্রাহ্মনীর টলমলে বুকটা
খেলার ছলে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঁদর ছেলে দুটো
আর ফিরল না সূর্যের আলো মাখতে
লোভনীয় তার কঙ্কালসার শরীর
অবৈধভাবে লুটে নিল তুড়ি মেড়ে
ব্রাহ্মনীর লোকজন অনেকবার গেছে ওদেরকে
বলতে কিন্তু আটকানো যায় নি
কিন্তু এখন তারাই শঙ্কিত ত্রস্ত
কটা বাজে?
যাই স্নানটা সেরে নিই।
৯) "ফনি"
যখন রাত্রি নামে দুচোখ বেয়ে
মনে থাকে শুধু ভয়
ভেসে যায় চোখের জলে
মনে পড়ে তোমার জয়।
থাকব কোথায় ফকির মোরা
ফুটপাতেতেই বিশ্ব
কদিন থাকব অনাহারে
হুল ফোটানো দৃশ্য।
ক্লান্ত মন আজ ছুটিতে বসে
দুলিয়ে যায় দোলা
আমরা ফকির, অনাহারী
আমরা পথভোলা।
১০) "নাশকতা"
আশ্রয়ে রেখে বন্দুক অ্যাসিড বোম
ঈশ্বর ঘুমঘোরে চেয়ে থাকে যম
তোমার গরম রক্তে লোম
খুনি, ধর্ষক, আক্রমণ কারী হচ্ছে না কম।
সময় খসেছে শুক্রাণুও গজিয়েছে দাড়ি
অশ্লীলতা পকেটে পুরে তুমি অস্ত্রধারী
নিপীড়নে অত্যাচারে তুচ্ছ জাতবিচারি
ব্যর্থতা নিঃসন্দেহে বিরাট মহামারী।
কুসংস্কারের আভায় জ্বলে না হ্যারিকেন
যে হাতগুলো রক্ত ঘাটে ফেলে দ্যায় পেন
রেলে বাসে বটতলায় পথসভায় রাগ
কে নেবে দায় টুকরো টুকরো মাংসের ভাগ?
১১) "গুমখুন"
একটা আস্ত কঙ্কাল কি হিমালয়ের
মতো দাঁড়িয়ে ছাতি চওড়া করে
বর্ষার নদীর মতো তর্জন গর্জন করে
বজ্রের মতো আচমকা চমকিয়ে দিয়ে
কি নিজের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করে
লুকায়িত তথ্যের আঙাড়ে কাঠি খোঁচানো
আর খাল কেটে কুমির ডেকে আনা
আর মৃত্যু সবই সমান
পুরী উড়িষ্যা ঢেকে রেখেছে কতটা অতলে
কত বছরের গভীরে
গৌর বর্ণ দেহ
মানবের কষ্ট সয়ে
এভাবেই কি সমুদ্রের দুঃখ হয়ে
চুপিসারে চলে যাওয়া
চূড়ান্ত মানবিকতার হিংসার স্রোতে!
১২) "অভিযোজন"
কিভাবে আঁকব বিলোপের ছবি কার্বনপেপার ছাড়া?
থেমে গেছিল নিঃশব্দে পুনরায় এসেছে তারা।
সাজায় ওরা গান ডানা মিলে হিল্লোলিত
পারে না কারা যে মানসিকভাবে পীড়িত।
প্রকৃতি মমতা উৎসারিত দুর্নিবার টানে
চড়ুই ফিরেছে সহসা আমার প্রাণে।
১৩) "মুখোশধারী"
আমার হৃদয় কাঁদছে ঐ শ্যাওলা মাখা ঘর
অপেক্ষায় গাছ মাটিতে পড়ে বয়েছে ঝড়।
চন্ডাল মৃত দাহর পরেও
ঐ বেদনা কমে না বাড়েও।
প্রকাশ্যে বাঁচে হত্যাজীবি কথাও বলি
যখন হাঁটি বর্ধমানের অলিগলি।
হয়ত সে পকেটে রাখে একটি ছিল
মিষ্টিমুখে মুখোশধারী খোঁজা মুশকিল।
১৪) "ঘরকুনো"
মৌলের পুকুরে তার বাস
ঐখানেই প্রতিদিন ডুবে যায় সাপটি
চমৎকার দেহ জল টানে
মুছে দেয় স্মৃতি সব
চোখ দুটি বের করে শিকার খোঁজে
তবুও আমার কাছে আসে না
হয়ত সে বোঝে জলে থাকার মর্ম।
১৫) "রাজনৈতিক ভালোবাসা"
চিরবৈরিতায় অন্তরঙ্গ আপ্রাণ
কে নেয় পোড়া গন্ধে ঘ্রাণ?
যার কার্যালয়ে ফাল্গুনের দহন
শান্ত পরিচয়ে সুবোধ একক মন।
গোলকধাঁধায় ঈশ্বর আহ্বান
তার আঙিনায় নব গুনগান।
ষড়যন্ত্রে গণতন্ত্রে কথার বাহার
অপরিশীলিতের শ্রদ্ধায় আহার।
লালায়িত সুপ্রিমকোর্ট পঞ্চব্যঞ্জনে নিমগ্ন
পরিপূর্ণ বাসনায় হয়েছে যে নগ্ন।
প্রত্যাশিত অবহেলার সূর্য উদয় হয়
রাজনৈতিক ভালোবাসায় যথার্থ অভিনয়।
১৬) "ঈশ্বর গুজব মুক্ত হও"
হে প্রভু মুক্তি শ্রম আর সইতে না পারি
ছড়ায়ে রয়েছে যেথায় দুখের মহামারি
যেথায় ডেকে চলে কাক সারাক্ষণ
সুখের পাশে বিড়ালের ক্রন্দন।
টুঁটি চেপে ধরে এখানের বিষবায়ু
লাঘব হয় না তবু পৃথিবীর আয়ু
সর্বদায় হেথায় হয়ে আছে নরক
প্রভু দূর কর হে দুঃখের মড়ক।
মরিয়া যেতেছে প্রানের দল
ঢালো হে প্রভু সুধা নিষ্ফল।
মলিন হতেছে গেহ
শূন্যে ভাসিছে কর্কট চিল
প্রেমে নেই প্রাণ কেহ।
১৭) "মেরি পোকা"
যতটুকু দাবি করে কোন রঙিন প্রচ্ছদের বই
দামি চকলেটের রঙিন মোড়ক
অথবা রোদের স্নিগ্ধতা
যতটুকু শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ানো
অথবা জিন্স-পাঞ্জাবি পকেটে সিগারেটের চতুরতা
যতটুকু অধরে অধর রেখে শুষে নেয় মেরি পোকা
ততটুকু এই সিংহকেশরের বাড়বাড়ন্ত।।
১৮) "স্কুল অনাথ"
কাছাকাছি সব বাড়ি মাঝে অঙ্গনওয়াড়ী স্কুল
একটু দূরে একটি গাছ বকুল
গোরু, ছাগল, মানুষের উপদ্রবে
দেওয়ালে গুটখার ছোপ
ছাগলের নাদাড়ি
গোরুর গোবর
মেঝেতে চান করে ছাত্রর বাবা
শায়া তুলে পাছার ছাল ছাড়িয়ে নেবে ছাত্রীর বাবা
কেন ডিম কম নেওয়া হবে?
এই পৃথিবীর নিরীহ পশুরা উদরপূর্তি করে লতাপাতার চত্বরে
রাতারাতি সিমেন্টের নির্জন পিলারের হাত-পা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে
নিঃস্পন্দ অ্যাডবেস্টারের চালাঘরে আদ্রপূর্ণ আকা
খারাপ কল টিপলে জল আসে না একবার না বহুবার
ছোট বড়ো পাথর থুতু মুত খড়ের নুটি গেলা তার অভ্যাস
নেতার বাড়ির পুরোনো জং ধরা কল হাঁপিয়ে উঠেছে
কড়াই খুন্তি ডেজগির কালি বড়ো অন্ধকার হাতে লেগে যাওয়ার ভয়ে এখন
পুকুরে নামে মালেদের ঐ রোগা পাড়া বউটা
চাবিহীন তালাহীন বাথরুমে পুরুষের পায়ের ছাপ জলে মোছে না
দেওয়ালে বাইরে নোনা জলের ক্ষত বিক্ষত মাটি আর কিছু দূর্বা ঘাস
স্কুলের মেঝেয় ছোটদের কাদার বক্স
আর বিদ্যাসাগর, গান্ধীর মুখে পাথরের কাটা দাগ।
১৯) "ধমক"
সন্ধ্যা বেলা, খাঁজ যুক্ত তেঁতুল গাছের, বাবলার শিষ হরি মঞ্জরির মতন,
তার পেছনে নীল আকাশ,
কুসুম বলয়ে কুসুম চাঁদ
একটি পাখি ডানায় দম দেয়
চুপ বসে একটি পাখি
একটি ঐখানেতে ঘোরে জলে
বেয়াড়া পাতিহাঁস চড়ে দলে
একটু গুমোট, একটু বায়ু
মিষ্টি করে কাক ডাকে
পিসিও ডাকে আই-আই ছোট বুলি করে
অনেক দিয়েছি ধমক
তাই সেজেছে ইন্দু অমন
...তাই মানে না বারণ।
২০) "ও ফুল"
ঘরে বসলে যেমন ভাতের গন্ধ ছাড়ে
তেমনি প্রেমের;
মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ সংরক্ষিত।
বর্ষা আসুক আর নাই আসুক;
আমি আলো খুঁজে বেড়াই
অন্ধকার মিলের জন্য।
২১) "পাথরের পাখি"
একটি পার্ক ছিল তার ওপর একটি পাথরের পাখি
নির্দেশ ছিল অনুরোধ ছিল কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল বাকি।
পদ্য রাখে চুমু রাখে সবুজ আড়ালের ঘাসে
মুখ কাঁচুমাচু বিদ্রোহ প্রতিবাদ বারমাসে।
জল বেরুতো কান্না হতো গাছের ফল খেত বসে
পড়া পালিয়ে নাম লেখালিখি পাথরে পাথর ঘষে।
সমালোচনা পরচর্চা ঝগড়া ঝাটি কত
সমালোচকের আক্রমণে দেহ রাখে তত।
ভাঙতে ভাঙতে ধুঁকতে ধুঁকতে একদিন গেল মিশে
বুলডোজার না লোহার পাগুলো উৎকৃষ্ট পিষে।
শেষরক্ষা হলো না আর সরকারেরই দোষ
পাথরের পাখি হদয়হীনা ঘুমন্ত আক্রোশ।
২২) "চিহ্ন"
একদিন তোমার আমার মিলন হবে
জানালাহীন, তারজালি দিয়ে ঘেরা
কচি ঘাসের মতো রং হবে পৃথিবীর
পাশে থাকবে মানুষ, চড়বে ভেড়া।
যাত্রাপথে কাঁটা যদি হয় মানুষ
হাসবে কত বন বিড়াল বাঁদর
পাশাপাশি আরও কত পাখি
মঙ্গলে যাবার আগেই ফানুস।
এত তিলকে তাল ঢিলে ঢিল
চুপচাপ সব রচনা লেখা বন্ধ
চুরি চামারি ঘর ভাঙাভাঙি ঠিক
ভুলে থাকব শোভাযাত্রা, মিছিল।
আরও একবার লেখা পাথরের বুকে নাম
পথে যেতে যেতে ছেড়ে যাব কিছু চিহ্ন
পড়ে থাকে থাক না ধোঁয়া হীন শশ্মান
উপলখন্ডে ছেড়ে যাব ছোট্ট চিঠির খাম।
২৩) "সীমান্তে সংগ্ৰাম"
নীলবর্ণ অপরাজিতার দেহ
কেউ সংগ্ৰামে অপেক্ষমান কেহ
প্রাণহীন যুদ্ধের মুরুভূমি রাত
যান্ত্রিকতার ষড়যন্ত্রের হাত।
এখানেই প্রেম সীমান্তে আছে শরীর
লোভহীন ইচ্ছায় জমে যায় ধুলো
সজাগ মন আনমনা তবুও ভুলো
চুপচাপ শোনা যায় না নাম হরির।
প্রেম নাশকতা ছড়ায় নাশকতা প্রেম
দিলে তো লাগিয়ে শরীরে আগুন
এ নগ্নতা বিছানাও পারে না কাটাতে
লোকে লোকে তাই করে দেয় খুন।
২৪) "রুদ্র রাগ"
পশুকে যারা খেতে পারে
বিশুদ্ধ নিছকই লোভে
বাস্তুতন্ত্র গন্ডগোলে
পোড়ায় সে ক্ষোভে।
গাছ পোড়ে মানুষ পোড়ে
পুড়ছে বনের বিভাগ
গন্ধ তাদের আসছে নাকে
ঢাকতে পারি না রাগ।
শশ্মান মশান পেনের ডগায়
লুকানো তরবারিও তাতে
বর্ম পরে যোদ্ধা সাজে
কাটি ভীষণ কাটছি দিন রাতে।
২৫) "গাছ"
প্রথমে নির্মমভাবে কাটে
পরে এদের ফাটে
আসে লজ্জাবোধ
তখন গ্ৰীষ্মের কাঠফাটা রোদ।
নিয়ে আসো টব
লাগাও চারা
বেশি বাড়ন্ত হলে
ছেঁটে করো বব।
তাপ্পর একদিন বুকে ধরে জ্বালা
অলিগলি ছেয়ে যায় পোস্টারে
রেডিও দূরদর্শনে ভাসে প্রচার
ভীষণভাবে গাছ লাগানোর পালা।
এইভাবে যতদিন কেটে যায় যাক
আমাদের আবার চিন্তা কীসের
শুধু আর মাত্র কটা দিন
বাবু একবার নাসায় চাকরিটা পাক।
২৬) "নিম্নচাপ"
বায়ুমণ্ডলে, আকাশের নীচে, অর্থনীতির পটে
ব্যাঙেদের সীমাহীন আনন্দ নদীর ধ্বনির মতো জাগে
আসানসোলে কলকাতায় উত্তেজনা ঘটে
বুকভেজা বর্ষাকালের বিরহের মতো লাগে।
এই দুর্যোগে দায়িত্ব নিয়ে আমি পৌরহিত্য করি
বাড়ি বাড়ি বেচতে কলা সকলের হাতে পায়ে ধরি
সেই কলাতে লেপে দিয়েছি ঈশ্বরের দাগ
ওরে ও গুখোগোর বিটি এবার তুই ভাগ।
ব্যারোমিটার অনেক প্রয়োজন নির্ণয় হবে মান
কার বুকের ক্ষতস্থান কতটা হল গভীর
প্রেম করা ভালো নয় এই মিথ এখন গান
আবহাওয়া দপ্তর শুধু কারণ বলেই ফকির।
তবু বাঁচাতেই হবে মিষ্টিকে মুখে ঝরছে লালা
বাঁচতেও হবে আমাকে তাই দিয়েছি লাইন
ত্রিকালেশ্বর আমি সামলাও নিজের জ্বালা
নির্জন আদিম রাস্তায় পুলিশও কাটে না ফাইন।
দেখি শিরীষের গায়ে ঝিরিঝিরি পড়ে জল
রক্তের উচ্চচাপ দুমড়াতে চায় নিম্নচাপ
এই অক্টোপাস বাঁধন দুর্ধষতার ফসল
কাটতে যেতে পারব না ধান করো মাফ।
২৭) "মুক্তি"
সংস্কৃতির বাহক হলেও দুর্বাসার অভিশাপ
মুক্তি পেতে বারুদের তামাক
ঋতুর রহস্য জ্বালে মোড়া আগাগোড়া
বিন্দু বিন্দু করে হোক খাঁক।
মুক্তির দীর্ঘস্থায়ী পথে এস বিশ্ব
সাধু সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনী নাও বাঁক
ডোম হয়ে জ্যান্ত জ্বালাও পোড়াও
আমি করে যাব সরলের শিষ্য।।
২৮) "নেশা"
কারোর প্রিয় দাবানল কারোর নেশা
কিছু করি না আমি না করাটাই পেশা।
আমিষে রাখা চিতলের মাংসে পাই
অধিক স্বাদ যার ওতে রাখা নাই।
ভালো লাগা খুঁজতে পাহাড়েই যাই
পৃথিবীও নিঃস্ব সেও বলে হায়।
আমার পেশার কাছে সব এসে জোটে
মানুষ করতে তৈরি মানুষ-ই ছোটে।।
২৯) "অবিচ্ছেদ্য নির্জনতা"
ঈশ্বর বোনে উল মৃতদেহ ঢাকে
তুমি অন্ধ চশমা পরো নাকে
এ পৃথিবী দুপুরের মত গরম
রক্ত-সাদা চামড়া খুব নরম।
বারবার হয় রাজাদের খেলা
দর্শক সেজে যায়
বেহালা সেতার আপনি বাজে
অশরীরী ছোঁয়ায়।
স্রোতের জল যাদুবলে হয় ঢেউ
আপনি নাকি খুব সুন্দর
হবেন কি প্রিয় আমার কেউ
কেন হতে পারি না বর?
৩০) "একটি মুদ্রা"
এ সভ্যতা ভালোবাসার মতো কোনো নারী নেই
নেই কোনো নর
ঘুচে যায় এ সভ্যতা কার্বন মনোক্সাইডে, ধোঁয়ায়
এ চিৎকার যদি থেমে যায় বেড়ে ওঠে কচি ফসলের ভীড়
ঠোঁটেতে উঠুক কূজন ছোট ছোট তারাদের নীড়
এ পথ খসে গেলে ভ্রমণ হয় না আর পৃথিবীর খাদ
সভ্যতার স্বাদ ডুবে যায় উন্মাদ মানব নির্বিবাদ
এ সময়ের ভার পড়ে থাকে গন্ধহীন জলের মিঠে
নর ও নারীর পরস্পর মুদ্রার উল্টো পিঠে ।।
৩১) "দর্পণ"
কিছু ভালোবাসা উন্নতি প্রদান করে
আমি সেই ভালোবাসা চাই
আর যেটা অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না
আমি তাতে নাই
যদি দর্পণ দেয় সুখ
তাহলে দেখ না
যদি সে চেনায়
তোমার মুখ দেখ
ছুটে ছুটে আমি যতবার গেছি আশে
থাকে নাই কেউ ছিল নাকো পাশে
যারা রয়ে গেছে আজ
তারা আমার অবিচ্ছেদ্য সাজ।।
৩২) "জমি"
এ দৃশ্য দেখে যুগের অসভ্য পুরুষকে থমকে যেতে হয়। গাড়িচালক আচমকা ব্রেক কষে। সাইকেলের গতি মন্থর হয়। মাঝির চোখ ঝলসে ওঠে।
অশ্লীলতার কোন ঈশ্বর হয় না। সংজ্ঞাও না। মনের ভিতর মহাবিশ্বের মহাকাশ। রক্ত-সাদা চামড়ার নায়িকা সরষে ফুলের মতো। স্নানরতা সাঁওতাল রমনীদের দেহ।
ছোট পাখি কূজন করে। মাধ্যাকর্ষণ কূটনীতি ছড়ায়। বোঝা বড়ো দায় ফুল কার জন্য ফোটে। নিজেকে সাজাতে না অন্যকে সাজাতে। দাঁতের পেশী শক্ত হয়।
পাতার এপিঠ ওপিঠ দানা দানা জল ঝরে। নেশা কর মর্ত্যবাসী। বারো হাতের কাপড় যতই লাল কারে পরিণত হোক। আরও ডিম ফুটুক এই পেশাদারী কর্মে।
শবরীর প্রেম সবার পোষায়। পোষায় না কেবল তার। থানায় ভাতের সন্ধান হয় না। হাসপাতালেও না। যা হয় স্থানীয় আড়তদারদের জমিতে। এই জমি ফসলে ঢাকা। চোখের আড়ালে ছোট ছোট ন্যাড়ায় নয়।
No comments:
Post a Comment