নিম্নলিখিত অনুবাদে ‘তাও তে চিং’-এর নির্বাচিত অংশগুলোকে পরিশীলিত ও গভীরভাবে ব্যাখ্যামূলকভাবে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে :
প্রারম্ভ
এক
যে তাও-কে ভাষায় প্রকাশ করা যায়,
তা চিরন্তন তাও নয়।
যে নামকে উচ্চারণ করা যায়,
তা চিরন্তন নাম নয়।
নামহীন যা কিছু—
তা-ই স্বর্গ ও পৃথিবীর সূচনা।
নামের অধিকারী যা কিছু—
তা-ই দশ-হাজার প্রাণের জননী।
এইজন্য :
চিরকাল আকাঙ্ক্ষাহীন থেকে,
তুমি উপলব্ধি করতে পারো এর সূক্ষ্ম রহস্য।
চিরকাল আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ থেকে,
তুমি দেখতে পাও এর বাহ্যিক রূপ।
এই দুইয়ের উৎপত্তি এক উৎস থেকে—
কিন্তু তাদের নাম পৃথক।
এই ঐক্যকে বলা হয় গভীর রহস্য।
গভীর রহস্য, আর তার গভীরতর রহস্য—
অগণিত সূক্ষ্মতায় পৌঁছবার দ্বার।
চার
তাও এক পাত্রের মতো—
ব্যবহার করো, তবু পূর্ণ করার প্রয়োজন নেই।
অতল ও গভীর!
তা-ই যেন দশ হাজার প্রাণের আদি-পুরুষ।
তাও ক্ষুরের ধার শাণ করে না,
গিঁট খুলে দেয়,
দীপ্তিকে মসৃণ করে,
জগৎ-ধূলির সাথে একাত্ম করে।
অতল গভীর! যেন অস্তিত্বের কণ্ঠস্বর মাত্র।
আমি জানি না, কার সন্তান এটি—
এর ছায়া ঈশ্বরেরও পূর্ববর্তী।
পাঁচ
আকাশ ও পৃথিবী দয়ালু নয়—
তারা দশ হাজার প্রাণকে দেখে খড়-কুকুরের মতো।
জ্ঞানীও দয়ালু নয়—
সে শত পরিবারকে দেখে খড়-কুকুরের মতো।
আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান—
তা কি বেলো বা বাঁশির মতো নয়?
শূন্য, তবুও শূন্য হয় না।
যত বেশি নড়ে, তত বেশি উৎপাদন করে।
অতিরিক্ত বাক্য ক্লান্তিকর—
তাই অন্তরের সুরক্ষা শ্রেয়।
ছয়
উপত্যকার আত্মা মৃত্যুহীন—
একে বলা হয় গভীর রহস্যময় নারী।
এই রহস্যময় নারীর দ্বার—
তা-ই স্বর্গ ও পৃথিবীর উৎস।
অক্ষয়, যেন চিরকাল থাকে—
এর ব্যবহার পরিশ্রম ছাড়াই ঘটে।
সাত
আকাশ চিরন্তন, পৃথিবী চিরস্থায়ী।
তারা চিরন্তন ও স্থায়ী, কারণ—
তারা নিজের জন্য বাঁচে না।
তাই তারা অমর।
এইজন্যই জ্ঞানী—
নিজেকে রাখেন পেছনে,
তবু থাকেন সবার আগে।
নিজেকে তুচ্ছ ভাবেন,
তবু নিজেকে টিকিয়ে রাখেন।
এটা কি নয়, কারণ তাঁর কোনো আত্মস্বার্থ নেই?
তাই সে-ই নিজের স্বার্থ অর্জন করেন।
নয়
ধরে রাখা আর পূর্ণ করে তোলা—
অপেক্ষাকৃত কম মূল্যবান,
যদি তুমি থেমে যাও সময়মতো।
ঘষে ঘষে ধার করা—
স্থায়ী রাখা যায় না।
সোনায় আর হীরায় ঘর ভরে থাকলে—
কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
বিত্ত ও উচ্চপদে থেকেও
যদি অহংকার থাকে—
তবে তার ক্ষতি নিজেরই কারণ হয়।
যখন কাজ সফল হয়,
তখন নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়—
এটাই স্বর্গের পথ।
দশ
শরীর ধারণ করে, একতাকে লালন করে—
পারো কি তুমি তাদের এক করতে?
তোমার চি (প্রাণশক্তি)-কে কোমল করে তোলো—
পারো কি তুমি নবজাতকের মতো হতে?
তোমার অন্তর্দৃষ্টি পরিষ্কার করো—
পারো কি তুমি কলঙ্কহীন হতে?
মানুষকে ভালোবেসে দেশ চালানো—
পারো কি তুমি কর্মহীন থেকে তা করতে?
স্বর্গের দ্বার খোলা ও বন্ধ করা—
পারো কি তুমি নারীত্বের ভূমিকা নিতে?
চারদিকে জ্ঞান ছড়িয়ে পড়লেও—
পারো কি তুমি জ্ঞান ব্যবহার না করে থাকতে?
তুমি সৃষ্টি করো, লালন করো,
কিন্তু নিজে অধিকার করো না।
কাজ করো, কিন্তু ফলের আকাঙ্ক্ষা রাখো না।
নেতৃত্ব দাও, কিন্তু কর্তৃত্ব কোরো না—
একেই বলা হয় গভীর ও রহস্যময় 'দে' (গুণ)।
তেরো
সম্মান ও অপমান— দুটোই বিপজ্জনক।
উচ্চ পদ— তা কষ্ট বয়ে আনে, যদি 'আমি' থাকে।
সম্মান-অপমান কেন বিপজ্জনক?
সম্মান পেলে তুমি অধীন—
তাই পাওয়াটা ভয়ের।
হারালে অপমান—
সেটাও ভয়ের।
এইজন্যই বলা হয় :
"সম্মান ও অপমান উভয়ই বিপজ্জনক।"
উচ্চ পদে থাকলে কেন দুঃখ আসে?
কারণ "আমি" আছে,
আমি-ই দুঃখের উৎস।
আমি যদি না থাকি,
তবে দুঃখ কোথা থেকে আসবে?
এইজন্যই :
যে নিজের অস্তিত্বকে নিয়ে বিশ্বকে সেবা করে—
তাকেই জগৎ তুলে দেওয়া যায়।
যে প্রেম দিয়ে সেবা করে—
তাকেই জগৎ তুলে দেওয়া যায়।
চৌদ্দ
চেয়ে দেখো, কিছু দেখা যায় না—
একে বলে অদৃশ্য।
শোনো, কিছু শোনা যায় না—
একে বলে অস্পষ্ট।
ছুঁইতে চাও, কিছু ধরা যায় না—
একে বলে সূক্ষ্ম।
এই তিনটির রহস্য আরও অনুসন্ধানযোগ্য নয়—
তারা মিলে একে-অপরের সঙ্গে মিশে যায়।
এই এক :
তার চূড়ান্ত কোনো দীপ্তিময় নয়,
তার নিম্নতমও কোনো অন্ধকার নয়।
অব্যাহত ও অনন্ত—
নাম দেওয়া যায় না।
তা আবার ফিরে যায় অস্থিত্বহীনতায়।
একে বলা হয় :
নিরাকার আকৃতি,
অস্তিত্বহীনতার প্রতিচ্ছবি।
এটি বিভ্রান্তিকর ও অস্পষ্ট।
তোমার সামনে এসে দাঁড়ালে,
তার সূচনা দেখা যায় না;
তার পেছনে হাঁটলেও,
তার শেষ পাওয়া যায় না।
প্রাচীন তাও-র
পথে স্থির থেকো—
বর্তমানকে আয়ত্ত করার জন্য।
পুরাতন আদির ধারণা জানা—
এটিই তাও-র মূলনীতি।
১৫
প্রাচীন কালের গুণীজনেরা ছিলেন অতীব সূক্ষ্ম, রহস্যময়, গূঢ় ও গভীর;
তাদের অন্তরযাত্রা বোঝা দুঃসাধ্য।
তাদের এই অগম্যতা থেকেই
আমরা কেবল তাদের ছায়াটুকু অনুকরণ করতে পারি :
সন্দিহান, যেন শীতল নদী পার হওয়ার সময় পা ফেলা,
সাবধানী, যেন চারপাশের প্রতিবেশীর চোখে চোখ না পড়ে।
ভদ্র, যেন অতিথির মতো।
নমনীয়, যেন বরফ ভেঙে পড়তে চলেছে।
নির্বিকার, যেন অপরিশীলিত কাঠ।
প্রশস্ত, যেন উপত্যকা।
অস্পষ্ট, যেন ঘোলা জল।
কে পারে এই ঘোলা জলে ধৈর্যের জলে স্বচ্ছতা আনতে?
কে পারে শান্তিকে ক্রমাগত চলনে প্রাণ সঞ্চার করতে?
যে ব্যক্তি এই পথ রক্ষা করে,
সে পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে।
ঠিক এই অপূর্ণতার কারণেই
সে রয়ে যায় গুপ্ত ও অপরিসমাপ্ত।
১৬
সর্বোচ্চ শূন্যতায় পৌঁছাও।
গভীর নিস্তব্ধতা রক্ষা করো।
সহস্র জীব একত্রে উদ্ভূত হয়,
আর আমি দেখি—তারা সকলেই ফিরে যায় তাদের উৎসে।
উৎসে ফিরে যাওয়া মানেই নিস্তব্ধতা।
নিস্তব্ধতা হলো প্রকৃতির নিয়মে ফেরা।
প্রকৃতির নিয়মে ফেরা মানেই চিরন্তনতায় ফিরে যাওয়া।
চিরন্তনতাকে জানা মানেই অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা।
চিরন্তনতা না জানা মানেই অজ্ঞতা ও দুর্ভাগ্যের সৃষ্টি।
চিরন্তনতাকে জানলে সহনশীলতা জন্মায়।
সহনশীলতা ন্যায়পরায়ণতা আনে।
ন্যায়পরায়ণতা রাজসত্তা আনে।
রাজসত্তা আনে স্বর্গ।
স্বর্গ আনে দাও।
দাও রক্ষা করে চিরস্থায়ীতা।
যখন স্বয়ং-ভাব বিলীন হয়, তখন আর বিপদের ভয় থাকে না।
২০
জ্ঞান বর্জন করো, আর উদ্বেগ থাকবে না।
"হ্যাঁ" আর "হুম" — তাদের মাঝে কতটুকুই বা পার্থক্য?
সুন্দর আর কুৎসিত — আসলেই কতটা ভিন্ন?
মানুষ যা ভয় পায়, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
কী অদ্ভুত! তারা নিজের কেন্দ্রে স্থিত নয়!
সবাই যেন উৎসবমুখর,
যেন 'তাই লাও' উৎসবের ভোজে মেতে আছে,
যেন বসন্তে উঁচু ধাপে উঠে যাচ্ছে।
শুধু আমি একা নিঃস্পন্দ,
যেন কারও চিহ্নবিহীন,
যেন সদ্যজাত, এখনও দেহে সাড়া নেই।
ক্লান্ত, নিঃস্ব, যেন ফেরার পথ নেই।
সবাই যতটুকু দরকার তার চেয়েও বেশি রাখে,
শুধু আমি হারিয়েছি সব!
আমার হৃদয় যেন নির্বোধের—
আমি যেন বিভ্রান্ত ও ঘোরে আচ্ছন্ন!
সাধারণ লোকেরা স্বচ্ছ ও জাগ্রত;
আমি যেন বিষণ্ন ও বিমূঢ়।
তারা স্থিত, যেন সাগর;
আমি যেন বাতাসে ভেসে যাই—
স্থিরতা নেই।
সবাইয়েরই উদ্দেশ্য আছে;
শুধু আমিই জড়, অবুঝ, এবং মনে হয় নিরর্থক।
আমি অন্যদের থেকে আলাদা,
কারণ আমি "মাতৃভোজন"—মূল দাও—কে মূল্য দিই।
২১
সর্বোচ্চ "দে" তখনই সম্ভব, যখন "দাও" অনুসৃত হয়।
দাও-এর কার্যক্রম রহস্যময় ও অস্পষ্ট।
রহস্যময়! অস্পষ্ট!—এর ভেতরে আছে চিত্র।
অস্পষ্ট! রহস্যময়!—এর ভেতরে আছে বস্তু।
অন্ধকার! গূঢ়!—এর গভীরে আছে সারসত্তা।
এই সারসত্তাই সত্য;
তার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সত্য।
বর্তমান থেকে অতীতে—
এর নাম কখনও মুছে যায়নি।
এইভাবে আমি প্রত্যক্ষ করি জীবমাতার রূপ।
কীভাবে?
এই পথেই।
২৩
স্বল্প বাক্য প্রকৃতির নিয়ম।
তাই : প্রবল বাতাস চলে না সারা সকাল,
হঠাৎ বৃষ্টি থাকে না সারাদিন।
এসব সৃষ্টি করে কে? স্বর্গ ও পৃথিবী।
স্বয়ং স্বর্গ-ধরণী যদি তা ধরে রাখতে না পারে,
তবে মানুষ কিভাবে পারবে?
তাই : যে দাও-কে অনুসরণ করে—
সে দাও-এর সঙ্গে একীভূত হয়।
যে দে-কে অনুসরণ করে—
সে দে-র সঙ্গে একীভূত হয়।
যে হারিয়ে ফেলে, সে হারানোর সঙ্গে একীভূত হয়।
যে দাও-এর সঙ্গে একীভূত,
দাও-ও তাকে স্বীকার করে।
যে দে-র সঙ্গে একীভূত,
দে-ও তাকে স্বীকার করে।
যে ক্ষতির সঙ্গে একীভূত,
ক্ষতিও তাকে আপন করে নেয়।
যদি তুমি যথেষ্ট বিশ্বাস না করো,
তবে কেউ তোমাকে বিশ্বাস করবে না।
২৪
যে ব্যক্তি আঙুলের ভর দিয়ে দাঁড়ায়, সে স্থির থাকতে পারে না।
যে ব্যক্তি চওড়া হয়ে হাঁটে, সে চলতে পারে না।
যে নিজেকে জাহির করে, তার অন্তর্দৃষ্টি নেই।
যে নিজেকে সঠিক ভাবে, সে আলাদা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
যে নিজের প্রশংসা করে, তার যোগ্যতা থাকে না।
যে আত্মম্ভরিতা করে, সে টেকে না।
যে ব্যক্তি দাও অনুসরণ করে—
সে এগুলোকে অতিরিক্ত ও বর্জনীয় বলে মনে করে।
সব জীবই এসবকে অপছন্দ করে।
তাই : যে দাও-র অধিকারী, সে এসব পথ ধরে না।
২৫
কিছু ছিল—নির্বাচিত না, তবু পূর্ণ—
যা আকাশ ও পৃথিবীর পূর্বেও ছিল।
নীরব! শূন্য!
একাকী দাঁড়িয়ে, অপরিবর্তনীয়,
সর্বত্র প্রবাহিত, অথচ অকলহ।
এটিকে বিশ্বের জননী বলা যায়।
আমি জানি না এর নাম;
আমি একে প্রতীকীভাবে "দাও" বলি।
যদি নাম দিতে হয়, আমি একে বলি "মহৎ"।
মহৎ মানে অগ্রসর হওয়া,
অগ্রসর হওয়া মানে দূরে যাওয়া,
দূরে যাওয়া মানে ফিরে আসা।
দাও মহান,
স্বর্গ মহান,
পৃথিবী মহান,
রাজাও মহান।
এইভাবে চারটি মহান সত্তা আছে,
এবং রাজা তাদের অন্যতম।
মানুষ অনুসরণ করে পৃথিবীকে,
পৃথিবী অনুসরণ করে স্বর্গকে,
স্বর্গ অনুসরণ করে দাও-কে,
আর দাও অনুসরণ করে স্বাভাবিকতাকে।
২৮
তুমি যদি তোমার পুরুষত্ব জানো,
তবে নারীসত্তাকে ধারণ করো।
বিশ্বের প্রবাহ হয়ে ওঠো।
যখন তুমি প্রবাহ হয়ে ওঠো,
চিরন্তন দে তোমাকে ত্যাগ করে না,
তোমার মধ্যে নবজাত শিশুর সারল্য ফিরে আসে।
তুমি যদি তোমার উজ্জ্বলতা জানো,
তবে তোমার আঁধারকে ধারণ করো।
বিশ্বের আদর্শ হয়ে ওঠো।
যখন তুমি আদর্শ হয়ে ওঠো,
তোমার দে কখনো হোঁচট খায় না,
তুমি সীমাহীনতার অবস্থায় ফিরে যাও।
তুমি যদি তোমার গৌরব জানো,
তবে তোমার অপমান ধারণ করো।
বিশ্বের উপত্যকা হয়ে ওঠো।
যখন তুমি উপত্যকা হয়ে ওঠো,
তোমার দে পূর্ণতা পায়,
তুমি ফিরে যাও অপরিশীলিত কাঠে।
যখন অপরিশীলিত কাঠ টুকরো হয়,
তখন তা হয়ে ওঠে সরঞ্জাম।
জ্ঞানী যখন তা ব্যবহার করেন,
তখন তিনি হন প্রধান রাজপুরুষ।
তাই : সর্বোচ্চ কর্তন—কাটে না।
ত্রিশ
যে ব্যক্তি জনগণের শাসককে সহায়তা করেন দাও-এর পথ অনুসরণ করে,
সে জগতে শক্তি ও অস্ত্রের আশ্রয় নেয় না—
কারণ তার ফলাফল ফিরে আসে তার কাছেই।
যেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান করে,
সেখানে কাঁটা আর ঝোপ-ঝাড় গজিয়ে ওঠে।
একটি মহাসেনা যেখানে যায়,
সেই বছরের ফসলও বিফল হয়।
যে ব্যক্তি দে-র দ্বারা ফল অর্জন করেন,
তিনি থেমে যান এবং সন্তুষ্ট থাকেন।
তিনি জোর করে কিছু গ্রহণ করেন না।
তিনি অর্জন করেন, কিন্তু গর্ব করেন না।
অর্জন করেন, কিন্তু আত্মপ্রচারে মগ্ন নন।
অর্জন করেন, কিন্তু অহংকারী নন।
অর্জন করেন, কেবল বাধ্য হয়ে।
অর্জন করেন, কিন্তু বলপ্রয়োগ করেন না।
যখন প্রাণীরা পূর্ণতায় পৌঁছে যায়,
তারপরই তাদের বার্ধক্য শুরু হয়—
এটাই বলা হয় ‘দাও নয়’।
আর ‘যা দাও নয়’, তার অবসানও ত্বরিত।
একত্রিশ
সুন্দর অস্ত্র—সৌভাগ্যের উপকরণ নয়।
সব জীবই এগুলো ঘৃণা করে।
অতএব, যে দাও ধারণ করে,
সে কখনো এদের ব্যবহার করে না।
যখন একজন মহৎ ব্যক্তি গৃহে থাকেন,
তিনি বামদিককে সম্মান দেন;
কিন্তু যখন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন,
তখন সম্মান দেন ডানদিকে।
অস্ত্র কখনো মহৎ ব্যক্তির উপকরণ নয়।
যখন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়,
তখন শান্ত ও নিরাসক্ত থাকা শ্রেয়—
কখনোই উল্লসিত নয়।
কারণ যে ব্যক্তি হত্যায় আনন্দ পায়,
সে এই পৃথিবীতে তার কাম্য বস্তু লাভ করতে পারে না।
শুভ বিষয়ে বামকে সম্মান,
অশুভ বিষয়ে ডানকে।
তাই সহকারী সেনাপতি থাকেন বামে,
প্রধান সেনাপতি থাকেন ডানে—
যেন তারা শোকাচ্ছন্ন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অবস্থান করছে।
যুদ্ধে মৃত্যুর বিজয়ও,
শোক ও কান্নার মধ্যেই পালন করা উচিত।
বত্রিশ
দাও চিরকাল নামহীন।
যদিও অনাকৃত কাঠের রূপ অনুজ্জ্বল,
তবুও জগতে কেউ তাকে জয় করতে পারে না।
যদি রাজারা ও অভিজাতরা একে ধারণ করতেন,
তবে দশ-হাজার সত্ত্বা আপনভাবে আনুগত্য প্রকাশ করত।
স্বর্গ ও পৃথিবী মিলিত হয়ে ঝরাত মিষ্টি শিশির,
কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই
জগৎ শুদ্ধ ও নিরপেক্ষ হয়ে উঠত।
কিন্তু একবার ভাগ করলে নামের সৃষ্টি হয়।
আর যখন নামের উৎপত্তি হয়,
মানুষকে জানতে হয় কখন থামতে হবে।
যখন থামা জানে, তখনই কোনো বিপদ থাকে না।
দাও জগতে যেভাবে কাজ করে, তার তুলনা করা যায়
একটি উপত্যকার প্রবাহের সঙ্গে,
যা নদী হয়ে মহাসাগরে মিশে যায়।
চৌত্রিশ
মহা দাও প্রবাহিত হয় এক অদম্য বন্যার মতো!
সে বামে যায়, ডানেও যায়।
দশ-হাজার প্রাণী এতে নির্ভর করে বেঁচে থাকে,
তবু দাও কাউকে ফিরিয়ে দেয় না।
সে তার কাজ পূর্ণ করে, তবু নিজেকে দাবি করে না।
সে জীবগুলিকে আচ্ছাদিত করে, পুষ্টি দেয়,
তবুও কারো প্রভু হয়ে ওঠে না।
এজন্যই, দাও চিরকাল কামনাহীন—
তাই তাকে ক্ষুদ্র বলা হয়।
তবু দশ-হাজার সত্তা তার দিকে ফিরে আসে,
আর সে কখনো অধিকার ফলায় না—
তাই তাকে বলা হয় মহান।
এইজন্যই, সাধু মহান হয়ে ওঠেন
কারণ তিনি কখনো মহান সেজে ওঠেন না।
এইজন্যেই, তিনি প্রকৃত অর্থে মহান।
পঁইত্রিশ
দাও চিরকাল নির্ক্রিয়তায় অবস্থান করে,
তবুও কিছুই ফেলে রাখে না।
যদি রাজারা ও অভিজাতরা একে ধারণ করতেন,
তবে দশ-হাজার প্রাণী আপনাআপনি পরিবর্তিত হতো।
যদি আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিত,
তবে আমি তা নিয়ন্ত্রণ করতাম
নামহীন অনাকৃত কাঠের মাধ্যমে।
যখন মানুষ সেই নামহীনতায় স্থিত হয়,
তখন তাদের কামনা থাকে না—
যখন কামনা থাকে না,
তখন স্থিরতা বিরাজ করে—
আর তখন জগত স্বয়ং নিজেই সুশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।
ঊনচল্লিশ
শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী দাও শুনে পরিশ্রম করেন ও অনুশীলন করেন।
মধ্যম জ্ঞানী দাও শুনে তাকে রক্ষা করেন, আবার হারিয়ে ফেলেন।
নিচু জ্ঞানী দাও শুনে উচ্চস্বরে হাসেন—
তারা না হাসলে, তা হতো না দাও।
অতএব, প্রাচীন উক্তিতে বলা হয় :
দাও উপলব্ধি যেন অন্ধকার।
দাও-র পথে অগ্রসর হওয়া যেন পশ্চাতে যাওয়া।
সরল পথ যেন জটিল।
শ্রেষ্ঠ গুণ যেন উপত্যকা।
মহান বিশুদ্ধতা যেন কলঙ্ক।
প্রচুর গুণ যেন অপ্রতুল।
স্থির গুণ যেন লক্ষ্যহীন।
সত্য চরিত্র যেন অস্থির।
মহৎ স্থানসীমাহীন।
মহৎ পাত্র শেষ হতে সময় নেয়।
মহৎ সুর হয় নীরব।
মহৎ রূপ হয় নিরাকার।
দাও অদৃশ্য ও নামহীন।
একমাত্র দাও-ই শুরু ও শেষ উভয়তেই সিদ্ধ।
৪১
উচ্চ স্তরের পণ্ডিত যদি দাও শুনে, সে মনোযোগ দিয়ে তা অনুশীলন করে। মধ্যম স্তরের পণ্ডিত দাও শুনে, সে তা ধরে রাখার মতো, আবার হারানোর মতোও। নিম্ন স্তরের পণ্ডিত দাও শুনলে তা নিয়ে উচ্চস্বরে হাসে। সে যদি হাসত না, তবে তা দাও হতো না।
তাই, প্রাচীন বচনে বলা আছে— দাও-র অন্তর্দৃষ্টি অন্ধকারের মতো, দাও-র পথে এগোনো যেন পিছিয়ে যাওয়া, মসৃণ দাও যেন জট বাঁধা, উৎকৃষ্ট দে যেন উপত্যকা, চরম পবিত্রতা যেন লজ্জা, প্রচুর দে যেন অপূর্ণতা, স্থির দে যেন উদ্দেশ্যহীন, বাস্তব চরিত্র যেন অনির্বচনীয়।
সর্ববৃহৎ অঞ্চল সীমাহীন, সর্ববৃহৎ পাত্র সবচেয়ে শেষে সম্পূর্ণ হয়, সর্ববৃহৎ সুর অতিসূক্ষ্ম, সর্ববৃহৎ রূপ নিরাকার।
দাও অদৃশ্য ও নামহীন। শুধুমাত্র দাও-ই শুরু ও শেষ উভয়কে সিদ্ধ করতে পারে।
৪৪
খ্যাতি না আত্মা—কোনটি বেশি প্রিয়? আত্মা না ধন—কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? লাভ না ক্ষতি—কোনটি বেশি দুঃখের কারণ?
অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা বৃহৎ ব্যয়ের দিকে নিয়ে যায়, অতিরিক্ত সঞ্চয় বৃহৎ ক্ষতির দিকে।
যে জানে কখন যথেষ্ট হয়েছে, তার কোনো লজ্জা নেই। যে জানে কখন থামতে হবে, তার কোনো বিপদ নেই। তাই সে চিরস্থায়ী হতে পারে।
৫১
দাও সৃষ্টি করে, দে লালন করে, বস্তু রূপ দেয়, পরিস্থিতি তা সম্পূর্ণ করে।
তাই দশ হাজার জীবের মাঝে কেউ নেই যারা দাওকে শ্রদ্ধা করে না, দে-কে সম্মান করে না। এই শ্রদ্ধা ও সম্মান— এটা কেউ আদেশ করে না, তবু তা স্বাভাবিকভাবেই ঘটে।
তাই—দাও সৃষ্টি করে, দে লালন করে, পথ দেখায়, পুষ্টি দেয়, আশ্রয় দেয়, নিরাময় করে, সহায়তা করে, রক্ষা করে।
তবে সৃষ্টি করেও অধিকার করে না, কর্ম করেও ফল নিয়ে ভাবে না, পথ দেখায়, কিন্তু শাসন করে না— এটাই গভীর ও রহস্যময় দে।
৫২
বিশ্বের একটি সূচনা ছিল, যা জগতের জননী হিসেবে বিবেচিত। তুমি যখন তার জননীকে জানো, তখন সন্তানদেরও জানো। সন্তানদের জানার পর তাদের জননীর কাছে ফিরে যাও ও তাকে আঁকড়ে ধরো।
নিজেকে হারালে, কোনো বিপদ থাকবে না।
ইন্দ্রিয় রোধ করো, দ্বার বন্ধ রাখো— সারা জীবন সংগ্রাম ছাড়াই যাবে। ইন্দ্রিয় খোলো, সফল হও দায়িত্বে— সারা জীবন আরাম পাবে না।
অতিক্ষুদ্রকে দেখা মানেই অন্তর্দৃষ্টি। নরমতা ধরে রাখা মানেই শক্তি। তোমার দীপ্তিকে ব্যবহার করে আবার অন্তর্দৃষ্টিতে ফিরে যাও। বিপদে নিজের সত্তা হারিয়ো না। এটাই চিরন্তনতার অনুশীলন।
৫৫
যে দে-র সারতত্ত্ব ধারণ করে, সে সদ্যজাত শিশুর মতো : বোলতা, বিচ্ছু, সাপ, বিষাক্ত সরীসৃপ তাকে দংশন করে না, হিংস্র পশুরা তাকে আক্রমণ করে না, শিকারি পাখিরা তাকে আঁচড়ে ধরে না। তার হাড় নরম, মাংসপেশি কোমল, তবু তার মুঠি দৃঢ়। সে নারী-পুরুষের মিলন জানে না, তবু তার লিঙ্গ সজীব হয়— সে চরম সারতত্ত্বে পূর্ণ! সারাদিন কাঁদে, তবু গলা বসে না— সে চরম সুরে পূর্ণ!
এই সুর জানাই চিরন্তনের পরিচয়। চিরন্তনকে জানাই অন্তর্দৃষ্টি। জীবনকে উপকৃত করাই সৌভাগ্য। হৃদয় কিউই চালিত করলে তা শক্তি।
যখন জীবেরা শক্তিশালী কিন্তু বৃদ্ধ, তখনই বলা হয় “এটা দাও নয়।” যা দাও নয়, তার সমাপ্তি ত্বরিত।
৫৬
যে জানে, সে বলে না। যে বলে, সে জানে না।
ইন্দ্রিয় রোধ করো, দ্বার বন্ধ করো। তীক্ষ্ণতা মসৃণ করো, জট খোলো, দীপ্তি কোমল করো, জগতের ধূলির সাথে এক হয়ে যাও।
এটাই গভীর ও রহস্যময় একতা।
তাই—তোমাকে পাওয়া যাবে না বন্ধুত্বে, পাওয়া যাবে না শত্রুতায়, পাওয়া যাবে না উপকারে, পাওয়া যাবে না ক্ষতিতে, পাওয়া যাবে না উচ্চ পদে, পাওয়া যাবে না অধমতায়।
তাই তুমি জগতের পক্ষে অমূল্য হয়ে ওঠো।
একচল্লিশ
যিনি শ্রেষ্ঠ বিদ্বান, তিনি তাও-র কথা শুনে নিষ্ঠা সহকারে অনুশীলন করেন।
যিনি মধ্যম মানের পণ্ডিত, তিনি তাওকে কখনো ধারণ করেন, কখনো হারিয়ে ফেলেন।
আর যিনি অধম, তিনি তাও-র কথা শুনে উচ্চস্বরে হাসেন।
সে হাসি না থাকলে, তাও তো তাও হতো না।
সেজন্যই প্রাচীন প্রবাদে বলা হয়েছে—
তাও-র অন্তর্দৃষ্টি যেন অন্ধকার।
তাওর পথে অগ্রগতি যেন পশ্চাদপসরণ।
তাওর পথ সমান, কিন্তু যেন বাঁধা।
শ্রেষ্ঠ গুণ যেন উপত্যকার মতো নত।
সবচেয়ে বিশুদ্ধতা যেন কলঙ্কের মতো।
সবচেয়ে প্রশস্ত গুণও যেন অপূর্ণ।
স্থির গুণ যেন লক্ষ্যহীন।
সত্য ও প্রকৃত চরিত্র যেন অস্থির।
সর্ববৃহৎ অঞ্চল সীমাহীন।
সর্বশ্রেষ্ঠ পাত্রটি সর্বশেষে প্রস্তুত হয়।
সর্বশ্রেষ্ঠ সুর হয় অতিসূক্ষ্ম।
সর্বশ্রেষ্ঠ রূপটি থাকে নিরাকার।
তাও গোপন, নামহীন।
তাওই একমাত্র যা শুরু করতেও পারে, শেষ করতেও পারে।
চুয়াল্লিশ
খ্যাতি আর নিজের মধ্যে—কাকে তুমি বেশি ভালোবাসো?
নিজের সঙ্গে সম্পদের মধ্যে—কোনটা বেশি মূল্যবান?
লাভ আর ক্ষতির মধ্যে—কে আসলে তোমার জন্য বিপদ?
অতিশয় আকাঙ্ক্ষা শেষমেশ বিশাল ব্যয়ের দিকে নিয়ে যায়।
অতিরিক্ত সঞ্চয় অবশেষে বড় ক্ষতির কারণ হয়।
যে জানে কখন যথেষ্ট, তার কোনো লজ্জা নেই।
যে জানে কখন থামতে হয়, তার কোনো বিপদ নেই।
তাই সে চিরকাল টিকে থাকতে পারে।
একান্ন
তাও সৃষ্টি করে,
তের গুণ লালন করে,
বস্তু তাদের আকৃতি দেয়,
পরিস্থিতি তাদের পরিপূর্ণ করে।
সুতরাং দশ হাজার জীবের মধ্যে কেউ নেই
যে তাওকে শ্রদ্ধা করে না, গুণকে সম্মান করে না।
তাওর শ্রদ্ধা, গুণের সম্মান—
কেউ তা আদেশ দেয় না, তবুও সেগুলি স্বাভাবিকভাবেই ঘটে।
তাই—তাও সৃষ্টি করে, গুণ লালন করে,
নেতৃত্ব দেয়, পুষ্টি দেয়,
আশ্রয় দেয়, রক্ষা করে,
সহায়তা করে, রক্ষা করে।
তারা সৃষ্টি করে, কিন্তু অধিকার করে না,
কার্য করে, কিন্তু ফলের প্রত্যাশা করে না,
নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু শাসন করে না—
এটাই গভীর এবং রহস্যময় গুণ।
বাহান্ন
পৃথিবীর একটি সূচনা ছিল,
যা এই জগতের জননী হিসাবে বিবেচিত।
যখন তুমি জননীকে জানো,
তখন সন্তানদেরও চেনো।
সন্তানদের জানলে,
জননীর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে ধরে রাখো।
নিজেকে হারালে, কোনো বিপদের ভয় নেই।
ইন্দ্রিয়গুলো বন্ধ করো, দ্বার রুদ্ধ করো—
সারাজীবন সংগ্রাম ছাড়া কাটবে।
ইন্দ্রিয় খোলো, দুনিয়ায় সফল হও—
সারাজীবন বিশ্রাম পাবে না।
ক্ষুদ্রতম জিনিস দেখা দূরদৃষ্টির পরিচায়ক।
নম্রতা ধারণ করা শক্তির প্রতীক।
নিজের আলোর সাহায্যে জ্ঞানে ফিরে এসো।
অসুস্থতার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব হারিও না।
এটাই বলা হয় চিরন্তন চর্চা।
পঞ্চান্ন
যিনি গুণের সত্য স্বরূপ ধারণ করেন,
তাকে সদ্যোজাত শিশুর সঙ্গে তুলনা করা যায়—
বিষাক্ত পতঙ্গ, বিছে, সাপ তাকে দংশন করে না,
হিংস্র জন্তু তাকে ধরে না,
শিকারি পাখি তাকে ছোঁড়ে না।
তার হাড় নরম, পেশি কোমল, তবু সে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে।
সে এখনো নারী-পুরুষ মিলনের কথা জানে না, তবু তার লিঙ্গ সোজা হয়ে ওঠে—
এটাই তার পরিপূর্ণ জীবনীশক্তি!
সে সারাদিন কাঁদে, কিন্তু গলা বসে না—
এটাই তার পরিপূর্ণ সুর!
সামঞ্জস্য বোঝা চিরন্তনতার ইঙ্গিত।
চিরন্তনতা বোঝা অন্তর্দৃষ্টির চিহ্ন।
জীবনের মঙ্গল হচ্ছে সৌভাগ্য।
হৃদয়-মস্তিষ্ক যদি প্রাণশক্তিকে চালায়, তবে তা বলে শক্তি।
কিন্তু যখন প্রাণীরা খুব বেশি সবল ও বৃদ্ধ হয়ে পড়ে,
তখন বলা হয়—এটা ‘তাও’ নয়।
যা ‘তাও’ নয়, তার শেষ দ্রুত ঘটে।
ছাপ্পান্ন
যে জানে, সে কথা বলে না;
যে কথা বলে, সে জানে না।
ইন্দ্রিয় বন্ধ করো, দরজা বন্ধ করো।
তীক্ষ্ণতা নিঃশেষ করো,
জটিলতা আলগা করো,
আলোকে নম্র করো,
পৃথিবীর ধুলোর সঙ্গে মিশে যাও।
এটাই গভীর ও রহস্যময় সমতা।
তাই—তোমার দ্বারা কেউ বন্ধুত্ব করতে পারবে না,
শত্রুতাও করতে পারবে না,
সুবিধা নিতে পারবে না,
অসুবিধাও করতে পারবে না,
তোমায় উচ্চপদে বসাতে পারবে না
,
অথবা হীনস্তরেও ফেলতে পারবে না।
সেইজন্যই তুমি জগতের জন্য অমূল্য হয়ে ওঠো।
৩
যাঁরা গুণবান, তাঁদের সম্মান না করলে
মানুষ উচ্চতর হওয়ার চেষ্টা করে না।
দুর্লভ বস্তুগুলোর মর্যাদা না দিলে
মানুষ চোর হয়ে ওঠে না।
ইন্দ্রিয়লোভনীয় কিছু না দেখালে
মানুষের হৃদয়-বুদ্ধি বিভ্রান্ত হয় না।
অতএব সাধু শাসন করে এভাবে—
হৃদয়কে করে শূন্য,
পেটকে করে পূর্ণ,
ইচ্ছাশক্তিকে করে দুর্বল,
হাড়কে করে দৃঢ়।
সাধু চেষ্টা করেন মানুষ হোক
অজ্ঞ ও নিরাসক্ত,
যেন চাতুর্যবানরা সাহস না পায় কিছু করতে।
নির্অভিযানে কাজ করো—
তবেই সব শাসিত হবে!
৮
সর্বোচ্চ গুণ হলো জলের মতো—
জল সকল সত্তার কল্যাণ সাধন করে, তবু প্রতিযোগিতা করে না।
সে অবস্থান নেয় সেইখানে, যা সকলেই অপছন্দ করে—
এইজন্যেই সে দাও-র তুল্য।
অবস্থান করায় গুণ হলো— ভূমিতে,
মনে গুণ হলো— গভীরতায়,
সম্পর্কে গুণ হলো— সদ্ব্যবহারে,
বাক্যে গুণ হলো— সত্যে,
শাসনে গুণ হলো— ন্যায়ে,
কর্মে গুণ হলো— দক্ষতায়,
ক্রিয়ায় গুণ হলো— সঠিক সময়ে।
যেহেতু সে প্রতিযোগিতা করে না—
তাই তার উপর কেউ দোষ দিতে পারে না।
১২
পাঁচটি রঙে চোখ অন্ধ হয়ে যায়,
পাঁচটি সুরে কান বধির হয়,
পাঁচটি স্বাদে জিভ হয়ে পড়ে নিস্পৃহ।
অতিরিক্ত শিকার ও রথদৌড়ে মন হয় উন্মত্ত,
দুর্লভ বস্তু মানুষকে করে দুর্নীতিগ্রস্ত।
অতএব সাধু—
মুখ ফিরিয়ে নেন বাহ্য থেকে,
মনোনিবেশ করেন অন্তরের উপর।
তাই তিনি এঁকে ত্যাগ করে, ওটিকেই বেছে নেন।
১৭
সর্বোত্তম শাসকের অস্তিত্বই বোঝা যায় না।
পরবর্তীকে মানুষ ভালোবাসে ও প্রশংসা করে,
তারপরে আসে ভয়ভীতির যোগ্য,
অতঃপর — উপহাসের পাত্র।
যদি শাসক বিশ্বাস না করেন,
তবে তিনিও বিশ্বাসযোগ্য হন না।
সাধু চিন্তাশীল,
তাই তার বাক্য অমূল্য।
যখন কাজ সফল হয় ও কর্তব্য পালিত,
লোকজন বলে— “আমরাই তো এমন!”
১৮
যখন মহাদাও ত্যাগ করা হয়,
তখনই আসে দয়া ও নীতিবোধ।
যখন বুদ্ধি ও চাতুর্য জাগে,
তখনই জন্ম নেয় প্রতারণা।
যখন ছয়টি সম্পর্ক থাকে বিশৃঙ্খল,
তখনই দেখা যায়— অবাধ্য পিতার প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি।
যখন জাতি ও পরিবারে থাকে বিশৃঙ্খলা,
তখনই জন্ম নেয় বিশ্বস্ত কর্মচারী।
১৯
পরিত্যাগ করো পবিত্রতা, ত্যাগ করো প্রজ্ঞা—
তবেই মানুষ লাভ করে শতগুণে।
ত্যাগ করো দয়া, পরিত্যাগ করো নৈতিকতা—
তবেই মানুষ ফিরে পায় পারিবারিক স্নেহ।
ত্যাগ করো চাতুর্য, পরিত্যাগ করো লাভের লোভ—
তবেই চুরি ও ডাকাতি বিলুপ্ত হয়।
এই তিনটি জিনিস সভ্যতার জন্য যথেষ্ট নয়।
অতএব—
মানুষকে দিন আশ্রয়,
দেখাও সরলতা,
আলিঙ্গন করো প্রাকৃতিক রূপ,
হও কম স্বার্থপর,
হও কম কামনাময়।
২২
যা বাঁকা, তাই সোজা হয়।
যা ফাঁকা, তা পূর্ণ হয়।
যা ক্ষয়প্রাপ্ত, তা নবায়িত হয়।
যা সামান্য, তা লাভ করে।
যা অতিরিক্ত, তা বিভ্রান্ত করে।
অতএব সাধু—
আত্মতাকে মিলিয়ে নেন ঐক্যে,
তাই তিনি হয়ে ওঠেন সকলের আদর্শ।
তিনি নিজেকে দেখান না— তাই অন্তর্দৃষ্টি আছে।
নিজেকে সঠিক বলেন না— তাই বিশিষ্ট হন।
নিজেকে বড়াই করেন না— তাই গুণী হন।
নিজেকে জাহির করেন না— তাই চিরস্থায়ী হন।
কারণ, তিনি প্রতিযোগিতা করেন না—
তাই কেউই তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না।
প্রাচীনদের বাক্য—
“যা বাঁকা, তাই পূর্ণ”—
এ কি ফাঁকা কথা?
পুর্ণতায় ফিরে যাও—
এই সত্যেই আছে দাও।
২৭
একজন দক্ষ পথিক রেখে যায় না চিহ্ন,
একজন দক্ষ বক্তা করে না কোনো ত্রুটি।
একজন দক্ষ হিসাবরক্ষক ব্যবহার করে না হিসাবের পাথর।
একজন দৃঢ় প্রাচীর রাখে না তালা, তবু খুলতে পারে না।
একজন দক্ষ বাঁধন রাখে না দড়ি, তবু খোলা যায় না।
অতএব সাধু—
সবসময় সাহায্য করেন, ত্যাগ করেন না কাউকে।
সব জীবের মঙ্গলচিন্তা করেন,
তাই পরিত্যাগ করেন না কাউকে।
এটিই অন্তর্দৃষ্টির অনুসরণ।
সুতরাং—
গুণবান ব্যক্তি গুণহীনের শিক্ষক।
গুণহীন ব্যক্তি গুণবানের উপাদান।
যদি শিক্ষককে শ্রদ্ধা না করে,
বা উপাদানকে ভালো না বাসে,
তবে জ্ঞান থাকলেও ছড়িয়ে পড়ে বিভ্রান্তি।
এটিই হলো— সূক্ষ্ম অথচ প্রয়োজনীয় রহস্য।
২৯
তুমি কি বিশ্বকে দখল করে চালাতে চাও?
আমি দেখছি— এ পথ তোমার নয়।
এই বিশ্ব এক অলৌকিক পাত্র,
যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
যে হস্তক্ষেপ করে, নষ্ট করে।
যে আঁকড়ে ধরে, হারায়।
সত্তারা—
কখনো সক্রিয়, কখনো নিষ্ক্রিয়,
কখনো দ্রুত, কখনো ধীর,
কখনো প্রবল, কখনো দুর্বল,
কখনো চেপে ধরা, কখনো উৎখাত।
অতএব সাধু—
অপসারণ করেন চরমতা,
ত্যাগ করেন অপচয় ও অহংকার।
অধ্যায় ৩৮
সর্বোচ্চ সদ্গুণের মানুষ নিজ গুণের কথা উচ্চারণ করে না,
এজন্যই সে সত্যিকারের সদ্গুণে পূর্ণ।
নিম্নগুণের মানুষ সদা তার গুণ আঁকড়ে ধরে,
এজন্যই সে গুণহীন।
সর্বোচ্চ সদ্গুণের মানুষ কর্ম করে নির্বিকারভাবে,
কোনো স্বার্থে নয়, উদ্দেশ্যহীনভাবে।
নিম্নগুণের মানুষ কাজ করে জোর করে,
স্বার্থবশে, উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে।
সর্বোচ্চ সদয়তা জোর করে কার্য সম্পন্ন করে,
তবুও তা স্বার্থবর্জিত।
সর্বোচ্চ ন্যায় জোর করে কাজ করে,
এবং তা হয় স্বার্থনির্ভর।
সর্বোচ্চ শিষ্টাচার জোর করে চলে,
যদি কেউ সাড়া না দেয়,
তবু সে জোর করে চলতে থাকে।
অতএব—
যখন তাও হারায়, তখন গুণ আসে।
যখন গুণ হারায়, তখন সদয়তা আসে।
যখন সদয়তা হারায়, তখন ন্যায় আসে।
যখন ন্যায় হারায়, তখন আসে শিষ্টাচার।
শিষ্টাচার কেবল ভানমাত্র –
বিশ্বাস আর সততার ছায়া,
এবং তা বিশৃঙ্খলার শুরু।
জ্ঞানী যিনি, তিনি তাওয়ের ফুল ধারণ করেন,
কিন্তু শুরু হয় তার বোকামি।
তাই মহাজ্ঞানীরা—
তাওয়ের সার গ্রহণ করেন, ফুল নয়।
তাওয়ের ফল নিয়ে থাকেন, তার অলঙ্কার নয়।
সেজন্য তারা বাহ্য ত্যাগ করে অন্তর গ্রহণ করেন।
অধ্যায় ৪৫
মহৎ সাফল্য অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়,
তবুও তার কার্যক্ষমতা ক্ষুণ্ন হয় না।
মহা পরিপূর্ণতা যেন একটি পাত্র—
যার উপযোগ ফুরায় না।
মহাসোজা পথ যেন বাঁকা,
মহা দক্ষতা যেন অদক্ষতা,
মহা বাগ্মীরা যেন নির্বাক।
উত্সাহ ঠাণ্ডাকে জয় করে,
নির্বিকারতা উত্তাপকে জয় করে।
শুদ্ধতা, স্বচ্ছতা, আর নীরবতা—
এই তিনেই বিশ্ব থাকে সঠিক ও সুশৃঙ্খল।
অধ্যায় ৪৬
যখন বিশ্বে তাও বিরাজ করে,
ঘোড়াগুলো সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যখন তাও অনুপস্থিত,
ঘোড়াকে যুদ্ধের জন্য লালন করা হয়।
চাওয়ার শক্তির চেয়ে বড় পাপ নেই,
অপর্যাপ্ততার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য নেই,
লোভের চেয়ে বড় ভুল নেই।
অতএব—
যে জানে কখন যথেষ্ট,
তার কাছে সবই যথেষ্ট।
অধ্যায় ৪৭
জগৎ জানতে দরকার নেই বাইরে যাওয়ার,
আকাশের পথ জানতে দরকার নেই জানালায় তাকানোর।
যত বাইরে যাও,
জ্ঞান তত কমে।
জ্ঞানী—
ভ্রমণ না করেও জানেন,
নিজেকে না দেখিয়েও পরিচিত,
কাজ না করেও সব সম্পন্ন করেন।
অধ্যায় ৪৮
জ্ঞান লাভে প্রতিদিন কিছু যোগ হয়।
তাও অনুশীলনে প্রতিদিন কিছু ক্ষয় হয়।
ক্ষয় এবং আরও ক্ষয়—
অবশেষে পৌঁছায় নিঃক্রিয়তায়।
নিঃক্রিয়তার মাধ্যমে—
কোনো কিছুই অসম্পূর্ণ থাকে না।
বিশ্বকে ধারণ করতে চাও?
তবে হস্তক্ষেপ ত্যাগ করো।
যখন হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হও,
তখন তুমি বিশ্ব ধারণের উপযুক্ত নও।
অধ্যায় ৪৯
জ্ঞানীর নিজের কোনও নির্দিষ্ট মন নেই,
তাই সকলের মনই তাঁর হয়ে ওঠে।
যিনি সদ্গুণী, তাঁর প্রতি সদ্গুণে আচরণ,
যিনি অসদ্গুণী, তাঁর প্রতিও সদ্গুণ—
কারণ সদ্গুণই সত্য গুণ।
যিনি সৎ, তাঁর প্রতি সততা,
যিনি অসৎ, তাঁর প্রতিও সততা—
কারণ সদ্গুণই সততা।
জ্ঞানী বিশ্বে থাকেন—
সবাইকে আপন করে।
সকল মানুষ তাঁর শ্রবণ ও দৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দেয়,
আর তিনি তাঁদের সন্তানের মতো দেখেন।
অধ্যায় ৫৩
আমি যদি সামান্য জ্ঞান নিয়েই মহাপথে চলি,
তবে যা ভয় পাব, তা হলো— পথভ্রষ্ট হওয়া।
মহাপথ সহজ,
তবু মানুষ চটকদার পথ পছন্দ করে।
রাজপ্রাসাদ সাজানো-গোছানো,
তবু মাঠ পড়ে থাকে আগাছায়,
শস্যাগার খালি।
রাজদরবারে ঝলমলে পোশাক,
তীক্ষ্ণ অস্ত্র,
ভোজন-বিলাসিতা,
অতিরিক্ত সম্পদের বাহুল্য।
এটিই ডাকাতি ও অপব্যয়ের নাম,
এ তো তাও নয়!
অধ্যায় ৫৪
যা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, তা উৎখাত হয় না।
যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, তা ত্যাজ্য নয়।
যে ব্যক্তি নিজেকে চর্চা করে—
তার গুণ সত্য হয়ে ওঠে।
পরিবারে চর্চা করলে—
গুণ পূর্ণ হয়।
পল্লিতে চর্চা করলে—
গুণ চিরস্থায়ী হয়।
রাষ্ট্রে চর্চা করলে—
গুণ প্রসারিত হয়।
বিশ্বে চর্চা করলে—
গুণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
অতএব—
নিজের মাধ্যমে নিজেকে বুঝো,
পরিবার দিয়ে পরিবারকে,
পল্লি দিয়ে পল্লিকে,
রাষ্ট্র দি
য়ে রাষ্ট্রকে,
বিশ্ব দিয়ে বিশ্বকে।
কিভাবে আমি জানি বিশ্ব এরূপ?
এই উপায়েই।
পঞ্চান্ন (৫৭)
ন্যায় ও সততা দিয়ে যদি জাতিকে শাসন কর,
অসামান্য কৌশলে যদি সৈন্য পরিচালনা কর,
আর অনাহস্তক্ষেপে যদি জগৎকে ধারণ কর—
তবে কেমন করে জানলে এসবই কার্যকর?
এইভাবেই জানি:
যখন নিয়ম ও নিষেধে পৃথিবী ভরে উঠে,
মানুষ আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে।
যখন হাতের কৌশল বাড়ে,
পরিবার ও দেশ বিশৃঙ্খলায় ডুবে যায়।
জ্ঞান যখন অতিশয় হয়,
অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা জন্ম নেয়।
আইনের নিয়ম যত বাড়ে,
চোর-ডাকাত তত বেড়ে যায়।
অতএব সাধক বলেন:
আমি কিছুই করি না—আর মানুষ আপন সত্তায় রূপান্তরিত হয়।
আমি প্রশান্তি পোষণ করি—আর মানুষ ন্যায়পরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমি হস্তক্ষেপ করি না—আর মানুষ স্বয়ং ধনবান হয়ে পড়ে।
আমি আকাঙ্ক্ষাশূন্য—আর মানুষ ফিরে যায় সেই অবিন্যস্ত কাঠের রূপে।
আটান্ন (৫৮)
যখন শাসন বড়ই নম্র,
মানুষ হয় সরল ও সৎ।
যখন শাসন অতিচতুর ও তীক্ষ্ণ,
মানুষ হয়ে পড়ে দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু।
অকল্যাণে বাস করে সৌভাগ্য,
সৌভাগ্যে গোপনে লুকায় অকল্যাণ।
কে-ই বা জানে তাদের পরিসীমা?
তারা প্রকৃত নয়।
যা সত্য, তা হয়ে ওঠে অদ্ভুত।
যা সদ্গুণ, তা হয় অচেনা।
মানুষের বিভ্রান্তি—
সে তো চিরকালীন।
অতএব সাধক—
তিনি সত্য, বিভাজনহীন।
তিনি মর্যাদাবান, কিন্তু কাউকে ক্ষতি করেন না।
তিনি সরল, কিন্তু অতিরিক্ত কিছু করেন না।
তিনি দীপ্তিমান, কিন্তু চোখ ঝলসে দেন না।
ঊনষাট (৫৯)
মানুষ শাসন কিংবা স্বর্গীয় দায়িত্ব পালনে,
সংযমই শ্রেয়।
এই সংযম—
তাকে বলে পূর্ব প্রস্তুতি।
পূর্ব প্রস্তুতি মানে সদ্গুণের দ্বিগুণ সঞ্চয়।
সেই সঞ্চয়ে
সব জয় সম্ভব।
যখন সব জয় হয়,
তখন কেউ তার সীমা বুঝে না।
সে তখন জাতির ধারক হয়।
আর জাতির ধারক হলে
সে চিরকাল টিকে থাকে।
এটাই গভীর মূল ও দৃঢ় ভিত্তি,
দীর্ঘ জীবন ও চিরদৃষ্টি’র পথ।
ষাট (৬০)
বড় জাতিকে শাসন করা
ছোট মাছ রান্নার মতো।
যেখানে ডাও আছে,
সেখানে আত্মারা ক্ষতিকর নয়।
না যে তাদের আত্মা নিঃসাড়,
তারা ক্ষতি করে না।
আর সাধকও
ক্ষতি করেন না।
এই দুই যদি ক্ষতি না করে,
তাদের সদ্গুণ মিলেমিশে ফিরে আসে।
একষট্টি (৬১)
বড় দেশ যেন সেই নিচু ভূমি,
যেখানে সব নদী মিলিত হয়—
পৃথিবীর নারীস্বরূপ।
নারী সবসময় শান্ত থেকে পুরুষ জয় করে।
এই শান্তিতেই সে নিচে থাকে।
তাই, বড় দেশ যদি ছোট দেশের নিচে থাকে,
তবে সে তাকে নিজের করে।
ছোট দেশ যদি বড় দেশের নিচে থাকে,
তবে তাকেও বড় দেশ অধিকার করে।
তাই,
এক দেশ নিচে থাকে—অধিকারের জন্য।
আরেক দেশ নিচে থাকে—অধিকৃত হবার জন্য।
বড় দেশের কামনা: গবাদিপশু আর মানুষ মিলানো।
ছোট দেশের চাওয়া: তার জনগণের কর্মসংস্থান।
উভয়ের এই অভিলাষ পূরণ হয়
যদি বড় দেশ নিচে থাকে।
বাষট্টি (৬২)
ডাও—সব সৃষ্টির গূঢ় রহস্য।
সৎ মানুষের ধন,
অসৎ মানুষের আশ্রয়।
সুন্দর বাক্য বাজারে চলে,
শ্রদ্ধা মানুষের কল্যাণ আনে।
অসৎ মানুষকেও
ত্যাগ করা ঠিক নয়।
তাই সম্রাট অভিষেকে কিংবা
ত্রয়ী মহাপুরুষ বসানোর সময়—
চতুষ্যুক্ত রথে বসে জেডের তশতরি আনা গেলেও,
এই পথের মন্ত্রণা তার চেয়ে শ্রেয়।
পুরাতন যুগের মানুষ কেন এত মূল্য দিত এই পথকে?
কারণ—
তারা বলত:
খোঁজো, পাবে।
দোষ স্বীকার করো, ক্ষমা পাবে।
তাই ডাও পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ।
তেষট্টি (৬৩)
কর্মহীনতায় করো সব কর্ম।
হস্তক্ষেপ ছাড়া সামলাও সব দায়িত্ব।
রুচিশূন্যের স্বাদ গ্রহণ করো।
বড় কাজকে মনে করো ক্ষুদ্র,
অত্যাধিককে ধরো স্বল্প হিসেবে।
বিরুদ্ধতাকে জয় করো সদ্গুণে।
কঠিন কাজের সূচনা হয় সহজতায়।
মহৎ কাজের জন্ম হয় ক্ষুদ্র রূপে।
সাধক তাই কখনও নিজের মহত্ব জাহির করেন না,
তাই সে প্রকৃত মহত্ত্ব অর্জন করেন।
যে সহজে প্রতিশ্রুতি দেয়,
তার উপর বিশ্বাস কম।
যে সব কাজ সহজ ভাবেন,
তার কঠিনতা বেশি হয়।
তাই সাধক সবকিছু কঠিন ভাবেন,
এবং শেষমেশ দুঃখে পড়েন না।
চৌষট্টি (৬৪)
যা শান্ত, ধরা সহজ।
যা শুরু হয়নি, পরিকল্পনা করা সহজ।
যা ভঙ্গুর, ভাঙা সহজ।
যা ক্ষুদ্র, বিলীন করা সহজ।
তাই আগে থেকেই কাজ শুরু করো।
মানুষ বিভ্রান্ত হবার আগেই শাসন করো।
বৃক্ষ, যা বড়, শুরু হয় ছোট চারা থেকে।
ন'তলার ঘর গড়ে উঠে এক মুঠো মাটি থেকে।
হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় পায়ের নিচ থেকে।
যে কাজ করে, সে নষ্ট করে।
যে আঁকে ধরে, সে হারায়।
তাই সাধক:
কাজ করেন না—কিছুই নষ্ট হয় না।
আঁকড়ে ধরেন না—কিছুই হারান না।
মানুষ প্রায় কাজ সম্পূর্ণ করে,
তবু শেষ মুহূর্তে নষ্ট করে।
যদি শুরু যেমন সাবধান, তেমনি শেষও হও,
তবে কিছুই নষ্ট হবে না।
সাধক:
চায় না আকাঙ্ক্ষা,
মূল্য দেয় না বিরল বস্তুকে,
শেখে না শেখার জন্য।
সে ফিরে যায় যা সবাই ফেলে গেছে,
আর দশ দিকের প্রাণীকে আপন স্বভাবেই বেড়ে উঠতে দেয়,
তবু সাহস করে কিছুই করে না।
পঁষষট্টি (৬৫)
প্রাচীন কালের সৎজনেরা,
তারা ডাও দিয়ে মানুষকে আলোকিত করত না—
বরং রাখত সহজ-সরল।
মানুষ শাসনে কঠিন হয়,
কারণ তারা জানে খুব বেশি কিছু।
জ্ঞান দিয়ে শাসন জাতির ক্ষতি আনে।
জ্ঞান ছাড়া শাসন—
জাতির সৌভাগ্য।
যে এই দুই জানে,
সে এগুলিকেই নেয় আদর্শরূপে।
এই আদর্শই—
গভীর ও গূঢ় সদ্গুণ।
এটি এত গভীর, এত বিস্তৃত,
যে সব প্রাণী যখন ফিরে আসে,
এটিও তাদের সঙ্গে ফিরে আসে।
আর তখন, সবার সঙ্গে সঙ্গতি ঘটে।
ছেষট্টি (৬৬)
নদী ও সমুদ্র রাজা হতে পারে শত উপত্যকার,
কারণ তারা নিচু থাকে।
তাই সাধক:
যদি নাগরিকদের উপরে থাকতে চান,
তবে কথায় নিজেকে নিচে রাখেন।
যদি তাদের আগে থাকতে চান,
তবে নিজেকে পেছনে রাখেন।
এইভাবেই,
তিনি উপরে থাকেন, তবু কারও বোঝা হন না।
তিনি আগে
থাকেন, তবু কারও ক্ষতি করেন না।
তাই মানুষ তাকে পছন্দ করে,
তার শাসনে ক্লান্ত হয় না।
তিনি সংগ্রাম করেন না,
তাই কেউ তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না।
অধ্যায় ১১
চাকার ত্রিশটি আঁকশি এক কেন্দ্রে মিলিত হয়,
শূন্যতার মাঝেই রথের কার্যকারিতা।
কাদায় জল মিশিয়ে বানানো হয় পাত্র,
তবুও ফাঁকাটুকু পাত্রের প্রকৃত ব্যবহার।
দরজা-জানালা কেটে তৈরি হয় ঘর,
শূন্যতার মাঝেই ঘরের ব্যবহার।
সুতরাং—যা আছে, তা জিনিসকে লাভজনক করে তোলে;
আর যা নেই, তা জিনিসকে কার্যকর করে তোলে।
অধ্যায় ২৬
গম্ভীরতা — হালকাতার উৎস।
নিস্তব্ধতা — চাঞ্চল্যের শাসক।
অতএব জ্ঞানী ব্যক্তি দিনভর যাত্রা করেন,
তবু রথ থেকে বিচ্যুত হন না।
জাঁকজমক ও ভোজ উপস্থিত থাকলেও,
তিনি সেগুলিকে অতিক্রম করে থাকেন।
তবে যে দশ হাজার রথের অধিপতি,
সে কিভাবে দুনিয়ায় হালকাভাবে আচরণ করবে?
হালকা হও, হারাও মূল;
চঞ্চল হও, হারাও নিয়ন্ত্রণ।
অধ্যায় ৩৩
যিনি অন্যকে জানেন, তিনি বুদ্ধিমান;
যিনি নিজেকে জানেন, তিনি অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন।
যিনি অন্যকে জয় করেন, তিনি শক্তিশালী;
যিনি নিজেকে জয় করেন, তিনি প্রকৃত শক্তিমান।
যিনি জানেন তাঁর যা আছে, তা যথেষ্ট, তিনিই ধনী;
যিনি বল প্রয়োগ করেন, তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে।
যিনি নিজের স্থান হারান না, তিনি স্থায়ী হন;
যিনি মৃত্যুর পরও বিলীন হন না, তাঁর প্রকৃত আয়ু।
অধ্যায় ৩৬
কিছু জড়ো করতে চাইলে, আগে তা ছড়িয়ে দিতে হয়।
দুর্বল করতে চাইলে, আগে তা শক্ত করতে হয়।
ত্যাগ করতে চাইলে, আগে আকর্ষণ করতে হয়।
গ্রহণ করতে চাইলে, আগে কিছু দান করতে হয়।
এটাই সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি।
নরম ও দুর্বল—জয় করে কঠিন ও শক্তকে।
মাছ কখনো গভীর জল ছেড়ে বেরোয় না;
রাষ্ট্রের ধারালো অস্ত্র কখনো জনসাধারণকে দেখানো যায় না।
অধ্যায় ৪০
তাওর গতি — সবকিছু ফিরিয়ে আনে।
তাওর কর্ম — দুর্বল করে।
জগতের দশ হাজার সত্তা জন্ম নেয় 'অস্তিত্ব' থেকে;
আর অস্তিত্ব জন্ম নেয় 'নৈঅস্তিত্ব' থেকে।
অধ্যায় ৪২
তাও সৃষ্টি করে এককে,
এক সৃষ্টি করে দুইকে,
দুই সৃষ্টি করে তিনকে,
তিন সৃষ্টি করে দশ হাজার সত্তাকে।
দশ হাজার সত্তা ধারণ করে ইয়িন, বক্ষে রাখে ইয়াং,
তাদের চি মিশে তৈরি করে সুর।
যা মানুষ অপছন্দ করে—
অকেলে, অনাথ, অসহায়—
তারাই রাজা ও মহারাজারা নিজেদের নামে ব্যবহার করে।
অতএব : হারা গিয়েও কেউ লাভ করে;
লাভ করেও কেউ হারায়।
যা মানুষ শিক্ষা দেয়, আমিও তাই শিক্ষা দিই :
অত্যাচারী ও দস্যুরা স্বাভাবিক মৃত্যু পায় না।
আমি হব তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক।
অধ্যায় ৪৩
পৃথিবীর সবচেয়ে কোমল বস্তু
বিজয়ী হয় সবচেয়ে কঠিনের উপর।
'নেই' জিনিসও প্রবেশ করে যেখানে জায়গা নেই।
এইভাবেই বুঝি ‘অকর্ম’ এর লাভ।
নীরব শিক্ষার শিক্ষা,
নির্কর্মের ফল—
এই জগতে খুব কম জনই জানে।
অধ্যায় ৫০
জন্ম আর মৃত্যুর মাঝামাঝি জীবন।
জীবনের অনুসারী দশে তিন।
মৃত্যুর অনুসারী দশে তিন।
আর যারা মৃত্যুর পথেই চলে জীবনের নামে—তাদেরও দশে তিন।
কেন এমন হয়?
কারণ তারা জীবনকে ভোগের বস্তু ভাবে।
কিন্তু শুনেছি—যে জীবনের যত্নে নিপুণ,
সে পর্বত পার হয়ে যায়—গন্ডার বা বাঘের মুখোমুখি হয় না,
যুদ্ধক্ষেত্রে ঢোকে—কিন্তু বর্মহীন, অস্ত্রহীন।
গন্ডারের শিং বসে না,
বাঘের নখ ফোটে না,
অস্ত্রের ধার লাগে না।
কেন?
কারণ তার মৃত্যু নেই।
অধ্যায় ৬৭
জগৎ বলে, আমি মহান,
তবু সাধারণের মত নই।
এই অস্বাভাবিকতাই আমার মাহাত্ম্য।
যদি সাধারণ হতাম, অনেক আগেই তুচ্ছ হয়ে যেতাম।
আমার তিনটি রত্ন আছে—
যা আমি ধরে রাখি।
প্রথমটি — করুণা,
দ্বিতীয়টি — সংযম,
তৃতীয়টি — জগতে প্রথম হতে না চাওয়া।
করুণায় তুমি সাহসী হতে পারো,
সংযমে তুমি বড় হতে পারো,
আর পিছনে থেকেও নেতৃত্ব পেতে পারো।
এখন লোকে করুণা ত্যাগ করেও সাহসী হতে চায়,
সংযম ত্যাগ করেও বড় হতে চায়,
পিছনে না থেকেও প্রথম হতে চায়—
এটাই মৃত্যু।
যুদ্ধে করুণা বিজয় দেয়,
রক্ষায় করুণা শক্তি দে
য়।
যদি স্বর্গ তোমায় সাহায্য করে,
তবে করুণার মাধ্যমেই তা করে।
অধ্যায় ৭০
আমার কথা সহজে বোঝা যায়, সহজে অনুসরণ করা যায়,
তবু কেউ বোঝে না, কেউ অনুসরণ করে না।
এই কথাগুলোর মূল আছে, কর্মও আছে;
কিন্তু লোকে জানে না মূলটা।
যারা জানে না, তারাই আমাকে জানে না।
জ্ঞানীরাই আমায় বোঝে,
আর তারাই মূল্য দেয়।
তাই জ্ঞানী ব্যক্তি ধোপদুরস্ত কাপড় পরে,
কিন্তু পরিধানের নিচে গোপন রাখে মহারত।
অধ্যায় ৭১
জানেও না, অথচ জানে ভেবে বসে—এটাই ব্যাধি।
ব্যাধিকে ব্যাধি বলে জানা—এটাই মুক্তি।
জ্ঞানী ব্যক্তি ব্যাধি বোঝেন বলে মুক্ত।
কারণ, তিনি মুক্ত বলে ব্যাধি হন না।
অধ্যায় ৭২
লোকেরা যখন ভয় পায় না কর্তৃত্বকে,
তখন ভয়ই তাদের ঘিরে ফেলে।
তাদের স্থান দাও, তাদের জীবন সহজ করো।
তাদের অতিরিক্ত কিছু দিও না।
যে নিজের জীবন ভালোবাসে,
সে অন্যের জীবনে হস্তক্ষেপ করে না।
অধ্যায় ৭৩
অত্যন্ত সাহসী—মরতে গিয়ে মারা পড়ে।
অত্যন্ত সাহসী—মরতে গিয়েও বেঁচে থাকে।
এই দুইয়ের মাঝে কে ঠিক?
তাও বলে না;
তাওর পথ নেই।
তাও জয় করে না,
তবু জয় এনে দেয়।
বলে না,
তবু উত্তরে পৌঁছায়।
ডাকে না,
তবু লোক আসে।
ধীর,
তবু কাজ পায় নিখুঁতভাবে।
স্বর্গের জাল বিরাট—
ফাঁক আছে,
তবু সবকিছু আটকে যায় তাতেই।
অধ্যায় ৭৪
যদি মানুষ মৃত্যুকে ভয় না করে,
তবে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ কী?
ধরা যাক, লোকেরা মৃত্যুকে ভয় পায়,
তবে কারা এমন শাসন করতে পারে যে হত্যা করে?
একজন যে মারতে জানে,
তাকে হত্যার দায়িত্ব দিলে
তা যেন ছুরি হাতে এক অনভিজ্ঞ কসাই।
সে নিজেকেই কেটে ফেলে।
অধ্যায় ৭৫
লোক কষ্টে থাকে—
কারণ শাসন অত্যধিক কর নেয়।
এইজন্য তারা ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
লোকেরা নিয়ম মানে না—
কারণ শাসক অত্যধিক কিছু চায়।
এইজন্য তারা বিদ্রোহ করে।
লোকেরা মৃত্যুকে তুচ্ছ ভাবে—
কারণ শাসক জীবনের প্রতি গুরুত্ব দেয় না।
তবে যে জীবনে বাঁচে—
সে কাউকে মৃত্যুর পথে ঠেলে না।
অধ্যায় ৭৬
জন্মের সময় মানুষ কোমল ও নমনীয়,
মৃত্যুর সময় শক্ত ও কঠিন।
গাছ ও ঘাস জন্মায় কোমল ও নম্র হয়ে,
আর মরে কড়ে ও শুকনো হয়ে।
অতএব শক্তি ও কঠিনতা—মৃত্যুর সঙ্গী,
নম্রতা ও কোমলতা—জীবনের সঙ্গী।
এইজন্য—
যে সেনা শক্ত, সে জয়ী হয় না;
যে গাছ কঠিন, তা ভেঙে পড়ে।
শক্ত ও বড়—নিচে পড়ে,
নম্র ও কোমল—উর্ধ্বে ওঠে।
অধ্যায় ৭৭
তাওর পথ—ধনীদের মতো নয়।
আকাশের ধন বয়ে আনে নিচে,
অতিরিক্তকে হ্রাস করে,
অভাবীদের দেয়।
মানুষের পথ ভিন্ন—
অভাবীদের থেকে নেয়,
ধনীদের দেয়।
কে নিজের সম্পদ দিয়ে
অভাবীদের দেয়?
শুধু যিনি তাওয়ালা—
তিনি দেন না দেখানোর জন্য,
তবু দেন।
সম্পন্ন করেন, দাবি ছাড়াই;
শেষ করেন, গর্ব ছাড়াই;
অধিষ্ঠান করেন না—এইজন্য তাঁর গৌরব থাকে।
অধ্যায় ৭৮
জগতে সবচেয়ে নমনীয় জল—
তবু তা কেটে ফেলে কঠিনতম শিলা।
নম্রতা জিতে নেয় শক্তিকে;
নম্রতা ভেদ করে কঠিনতাকে।
এ কথা সবাই জানে,
কিন্তু কেউ অনুসরণ করে না।
তাই জ্ঞানী বলেন—
যে অন্যের দোষ নেয়, তিনিই জগতের রাজা।
যে নিচু স্থান নেন, তিনিই রাষ্ট্রের অধিপতি।
সত্য ভাষা—বিরুদ্ধ ভাষা।
অধ্যায় ৭৯
বড় বিরোধ মিটলেও
তাতে কিছু বিরক্তি থেকেই যায়।
এটাই জানে জ্ঞানী,
তাই সে দেনা-পাওনার মধ্য দিয়ে না দেখে
তাওর পথ অনুসরণ করে।
তাওর পথে কেউ দাবিদার নয়—
তবু সে অন্যায় করে না।
জ্ঞানী তার দায়িত্ব পালন করে—
তবু দাবিদার হয় না।
অবিবেচক চায় যেন অন্যায় স্বীকৃত হয়।
অধ্যায় ৮০
একটি ছোট রাষ্ট্র গড়ে ওঠুক
অল্প জনসংখ্যা নিয়ে।
অস্ত্র থাকুক, কিন্তু প্রয়োগ না হোক।
লোকেরা জীবন ভালোবাসুক,
ভ্রমণে না যাক দূরে।
যদিও নৌকা আছে, তারা তা ব্যবহার না করুক;
যদিও রথ আছে, তারা তাতে না চড়ুক।
তাদের আবার কাটা দাগ ও গাঁটছড়ার দিকে ফিরতে দাও,
পুরনো কাপড় পরুক, পুরনো খাদ্য খাক,
তাদের সরল জীবন হোক।
পাশের রাষ্ট্রে কুকুরের ঘেউঘেউ বা মোরগের ডাক শোনা যাক,
তবু লোকেরা সেখানেও না যাক,
জীবন ভরে থাক, মৃত্যু অবধি।
অধ্যায় ৮১
সত্য কথা মধুর নয়,
মধুর কথা সত্য নয়।
ভাল লোক তর্ক করে না,
তর্কপ্রিয় লোক ভাল নয়।
জ্ঞানী লোভী নয়,
লাভ করে দানের মধ্য দিয়ে।
তাওয়ালা মানুষের জন্য কাজ করেন,
আর নিজের কথা রাখেন না।
যে নিজেকে পূর্ণ করেন,
তিনি সত্যিই পূর্ণ।
অধ্যায় ২
সবাই সুন্দরকে চেনে—
এইজন্য কুৎসিত আসে।
সবাই ভালকে চেনে—
এইজন্য মন্দ আসে।
অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব
একই থেকে জন্মায়।
কঠিন ও সহজ
একইতর ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে।
দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত
তুলনার ফলে জন্মায়।
উচ্চ ও নিম্ন
পরস্পরের জন্যেই নির্ধারিত।
শব্দ ও ধ্বনি
একই সুরের অংশ।
পূর্ব ও পর
অনুসরণের ফলে নির্ধারিত।
অতএব জ্ঞানী জন
কর্ম করেন অকর্মে,
শিক্ষা দেন নির্বাক শিক্ষা।
তিনি সৃষ্টিকে জন্ম দেন,
তবু দাবি করেন
না।
কর্ম করেন,
তবু ফল চান না।
সম্পাদন করেন,
তবু ধরে রাখেন না।
আর যেহেতু তিনি দাবি করেন না,
তাই কিছু হারান না।
No comments:
Post a Comment