আধুনিক প্রবন্ধসমূহ
আমেরিকান সাহিত্য
জন মেসি লিখিত
জন মেসির প্রশংসনীয় গ্রন্থ The Spirit of American Literature, যা ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তার প্রথম অধ্যায়টি হলো এই শক্তিশালী আলোচনা। বইটি চতুর, গভীরতাপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত, তবে দুর্ভাগ্যবশত এটি সেই বিপুল সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি, যারা বইটি পড়ে স্থায়ী আনন্দ ও উপকার লাভ করতে পারতেন।
জন মেসি নিজেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনার জন্য কোনো চটকদার কৌশল বা চমকপ্রদ উপস্থাপনার আশ্রয় নেননি। মঞ্চের ওপর কোনো স্পটলাইট তাঁর দিকে নির্দেশ করা হয়নি। কিন্তু যারা এমন সমালোচনা পছন্দ করেন যা প্রাণবন্ত অথচ অহংকারবর্জিত, কঠোর অথচ বিদ্বেষমুক্ত, তীক্ষ্ণ অথচ দুশমনি-শূন্য—তারা তাঁকে সাহিত্যের জগতে একজন প্রকৃত দক্ষ ও উদারচিত্ত বিশ্লেষক হিসেবে চেনেন।
জন মেসির জন্ম ১৮৭৭ সালে, ডেট্রয়েটে। তিনি ১৮৯৯ সালে হার্ভার্ড থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে Youth’s Companion এবং Boston Herald পত্রিকায় সম্পাদকীয় কাজ করেন। বর্তমানে তিনি গ্রিনউইচ ভিলেজে বাস করেন এবং The Freeman ও The Literary Review-এ নিয়মিত লিখে থাকেন। যদি আপনি কোনোদিন ষষ্ঠ এভিনিউয়ের পূর্ব পাশে চতুর্থ স্ট্রিটে হাঁটতে থাকেন, তবে হয়তো তাঁকে চিন্তামগ্ন ভঙ্গিতে পথ চলতে দেখতে পাবেন—একটি প্রশস্ত সম্ব্রেরো (মেক্সিকান টুপি) মাথায়, আর কপালের ওপর পড়ে থাকা লৌহ-ধূসর চুলের ঝুঁটি সামলানোর চেষ্টায়। একবার দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি এক হৃদয়গ্রাহী মানুষ। আমি এখনো মনে করি, কয়েক বছর আগে বোস্টনের বিখ্যাত সেন্ট বোটলফ ক্লাবে উজ্জ্বল অগ্নিকুণ্ডের সামনে তাঁকে প্রথম দেখার সেই দৃশ্য। সেখানে তিনি প্রায়শই ছিলেন একদল সজীব রাতজাগা দার্শনিকদের কেন্দ্রবিন্দু।
এই প্রবন্ধটি লেখা হয়েছিল ১৯১২ সালে, তখন আমেরিকান সৃজনশীল সাহিত্যের নবজাগরণ শুরু হয়নি, যা মূলত বিংশ শতাব্দীর ‘টিনস’ (১৯১০-১৯১৯) পর্বে প্রসার লাভ করে। পাঠকের জন্য এটি ভাবার বিষয় যে, যদি মেসি আজ এই প্রবন্ধ লিখতেন, তাহলে তাঁর বক্তব্য কতটা পরিবর্তিত হতো।
The Spirit of American Literature বইটি Boni and Liveright প্রকাশনা সংস্থা সাশ্রয়ী মূল্যে পুনঃপ্রকাশ করেছে। এটি সংগ্রহ করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
আমেরিকান সাহিত্যের চেতনা
(১)
প্রত্যেক জাতির সাহিত্য তার চরিত্রের একটি প্রতিফলন। জাতির ব্যক্তিত্ব যেমন, তার সাহিত্যও তেমনই হবে। যদি কোনো দেশের জনসাধারণ মুক্ত, স্বাধীন এবং সুগঠিত চিন্তাধারার অধিকারী হয়, তবে তাদের সাহিত্যও হবে উদার ও শক্তিশালী। আবার, যদি জনগণ সংকীর্ণমনা, অন্ধবিশ্বাসে আবদ্ধ ও নিষ্ক্রিয় হয়, তবে তাদের সাহিত্যও হবে জড় ও নিষ্প্রাণ।
আমেরিকান জাতির আত্মা বোঝার জন্য আমাদের প্রথমেই জানতে হবে তাদের জাতীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমেরিকানদের মধ্যে আছে স্বাধীনতার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষা, আত্মনির্ভরতা, কার্যক্ষমতা এবং একধরনের উদ্যমী চেতনা, যা তাদের সাহিত্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ইউরোপের অনেক জাতির তুলনায় আমেরিকান সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য একটু আলাদা, কারণ এটি গড়ে উঠেছে এক নতুন পৃথিবীতে, নতুন আদর্শ ও নতুন বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে।
যদি আমরা আমেরিকান সাহিত্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করি, তবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের নজরে আসে—
১. একটি স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল চেতনা
২. বাস্তবধর্মী ও কার্যকর মনোভাব
৩. একটি আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করে
আমেরিকার সাহিত্যে যে স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল চেতনা আছে, তা মূলত ইংরেজি সাহিত্য থেকে উৎসারিত হলেও, এতে ইউরোপের অন্যান্য সাহিত্যের প্রভাবও স্পষ্ট। ব্রিটিশ সাহিত্যের মতোই এটি গভীর ও ব্যঞ্জনাময়, কিন্তু এতে আছে এক বিশেষ প্রকারের বাস্তবতা ও আশাবাদ, যা একে স্বতন্ত্র করেছে।
এখন যদি আমরা আমেরিকান সাহিত্যের প্রধান লেখকদের দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাব, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে এই জাতীয় চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এমারসন, হথর্ন, থরো, হুইটম্যান, মার্ক টোয়েন—তাঁদের রচনায় আমরা এই চেতনাগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।
আমেরিকান সাহিত্যকে গভীরভাবে বুঝতে হলে আমাদের শুধু তার শ্রেষ্ঠ লেখকদের রচনাগুলোকেই পড়লেই চলবে না, বরং তার ঐতিহাসিক বিকাশকেও অনুধাবন করতে হবে। আমেরিকান সাহিত্য কেবল সাহিত্য নয়, এটি আমেরিকার আত্মার প্রতিচ্ছবি।
(২) আমেরিকান সাহিত্যের উৎস ও বিকাশ
আমেরিকান সাহিত্য মূলত ব্রিটিশ সাহিত্যের একটি সম্প্রসারণ হিসেবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য লাভ করে এবং সম্পূর্ণ আলাদা পরিচয় তৈরি করে।
যখন ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা আমেরিকায় এল, তখন তারা তাদের সংস্কৃতি ও সাহিত্যকেও সাথে করে এনেছিল। প্রথমদিকে, আমেরিকার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা। পিউরিটান লেখকরা বাইবেলের শিক্ষাকে কেন্দ্র করে সাহিত্য সৃষ্টি করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন, সাহিত্য হবে নৈতিকতার বাহক, যা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।
ধীরে ধীরে, আমেরিকান সাহিত্যে নতুন এক চেতনা জন্ম নেয়—এটি ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনা। আঠারো শতকে আমেরিকান বিপ্লব যখন ঘটল, তখন সাহিত্যে দেশপ্রেম, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং মানবাধিকারের মতো বিষয় প্রবলভাবে ফুটে উঠতে লাগল।
(ক) ঔপনিবেশিক যুগের সাহিত্য
এই সময়ের সাহিত্য বেশিরভাগই ছিল ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক। উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড, অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট, জনাথন এডওয়ার্ডস প্রমুখ লেখক এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তারা মূলত ডায়েরি, ধর্মীয় উপদেশ, কবিতা এবং ঐতিহাসিক বিবরণ লিখতেন।
(খ) বিপ্লবী যুগের সাহিত্য
এই সময়ের সাহিত্য স্বাধীনতার ধারণাকে তুলে ধরে। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থমাস পেইন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, টমাস জেফারসনের মতো লেখক ও দার্শনিকরা তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই সময়ের সাহিত্য সাধারণত রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ছিল।
(গ) উনিশ শতকের সাহিত্য
এই সময় আমেরিকান সাহিত্য সত্যিকার অর্থে বিশ্বসাহিত্যে নিজের পরিচিতি তৈরি করে। রোমান্টিক আন্দোলনের প্রভাব পড়ে আমেরিকান সাহিত্যে, এবং এই সময় রাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন, নাথানিয়েল হথর্ন, হেনরি ডেভিড থরো, ওয়াল্ট হুইটম্যান, এডগার অ্যালান পো-র মতো লেখকরা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন।
(ঘ) বিশ শতকের সাহিত্য
বিশ শতকে আমেরিকান সাহিত্য আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। হারলেম রেনেসাঁ, মডার্নিজম এবং পরবর্তী সময়ে পোস্টমডার্নিজমের প্রভাব দেখা যায়। এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইলিয়াম ফকনার, ল্যাংস্টন হিউজ, টনি মরিসন প্রমুখ লেখকরা এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আমেরিকান সাহিত্যের এই বিকাশ শুধু একটি জাতির ইতিহাস নয়, বরং এটি একটি আদর্শগত আন্দোলনের প্রতিফলন। এটি ব্যক্তিস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বাস্তববাদ, এবং মানবতার গভীর চেতনাকে ধারণ করে।
(৩) আমেরিকান কবিতার বিকাশ
আমেরিকান সাহিত্য যেমন সময়ের সাথে বিকশিত হয়েছে, তেমনি আমেরিকান কবিতাও তার নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেছে। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত আমেরিকান কবিতা বিভিন্ন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে এবং বৈচিত্র্যময় রূপ নিয়েছে।
(ক) ঔপনিবেশিক যুগের কবিতা
আমেরিকান কবিতার সূচনা হয় ধর্মীয় ও নৈতিক ভাবধারার মাধ্যমে। প্রথম দিকের কবিরা মূলত পিউরিটান জীবনধারা ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে কবিতা লিখতেন। অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট ছিলেন এই সময়ের প্রধান কবি, যিনি তাঁর কবিতায় পারিবারিক জীবন, ধর্ম এবং নারীর অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছিলেন।
(খ) উনিশ শতকের কবিতা
উনিশ শতকে আমেরিকান কবিতা নতুন এক মাত্রা লাভ করে। এই সময়ে রোমান্টিকতা ও ট্রান্সসেন্ডেন্টালিজমের প্রভাব পড়ে কবিতায়। রাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন এবং হেনরি ডেভিড থরো এই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ ছিলেন।
ওয়াল্ট হুইটম্যান এবং এমিলি ডিকিনসন
ওয়াল্ট হুইটম্যান: তাঁর কাব্যগ্রন্থ Leaves of Grass আমেরিকান কবিতায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। হুইটম্যান মুক্ত ছন্দে (free verse) কবিতা লিখতেন এবং গণতন্ত্র, প্রকৃতি, মানবতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশংসা করতেন।
এমিলি ডিকিনসন: তাঁর কবিতা ছিল রহস্যময় ও গভীর। তিনি সংক্ষিপ্ত এবং বিমূর্ত ভাষায় প্রেম, মৃত্যু, প্রকৃতি ও আত্মপরিচয় নিয়ে লিখতেন।
(গ) বিশ শতকের কবিতা
বিশ শতকে আমেরিকান কবিতা আরও বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে। এই সময়ে মডার্নিজম ও পরবর্তীতে পোস্টমডার্নিজমের প্রভাব দেখা যায়।
মডার্নিস্ট কবিরা
রবার্ট ফ্রস্ট: তাঁর কবিতা প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনের প্রতিচিত্র তুলে ধরে, যেখানে গভীর দার্শনিক ভাবনা থাকে।
টি. এস. এলিয়ট: তাঁর কবিতা (The Waste Land) ছিল জটিল, প্রতীকসমৃদ্ধ এবং আধুনিক বিশ্বের বিচ্ছিন্নতাবোধকে প্রকাশ করত।
এজরা পাউন্ড: আমেরিকান ইমেজিস্ট কবিদের অন্যতম, যিনি সরল ও শক্তিশালী ভাষায় কবিতা লিখতেন।
হারলেম রেনেসাঁ ও আফ্রিকান-আমেরিকান কবিতা
ল্যাংস্টন হিউজ: তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান অভিজ্ঞতা, বর্ণবাদ, সংগ্রাম ও স্বপ্নকে তাঁর কবিতায় তুলে ধরেন।
(ঘ) সমকালীন আমেরিকান কবিতা
বিশ শতকের শেষভাগ ও একবিংশ শতকে আমেরিকান কবিতায় আরও বৈচিত্র্য এসেছে। নারী, আদিবাসী, অভিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কবিরা তাঁদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছেন।
গুরুত্বপূর্ণ সমকালীন কবি
মায়া অ্যাঞ্জেলো: তিনি বর্ণবাদ, নারী অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে কবিতা লিখেছেন।
টনি মরিসন: তাঁর সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি কবিতায় আফ্রিকান-আমেরিকান ঐতিহ্যের ছাপ রয়েছে।
উপসংহার
আমেরিকান কবিতা কেবলমাত্র একটি সাহিত্যের ধারা নয়, এটি আমেরিকার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবর্তনেরও প্রতিফলন। সময়ের সাথে সাথে এটি বিভিন্ন রূপে ও ধারায় বিকশিত হয়েছে, এবং এখনও বিশ্বসাহিত্যে এর প্রভাব অপরিসীম।
(৪) আমেরিকান উপন্যাসের বিবর্তন
আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল উপন্যাস। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত আমেরিকান উপন্যাস বিভিন্ন রূপ ও শৈলীতে বিকশিত হয়েছে। এটি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং আমেরিকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিফলনও বহন করে।
(ক) ঔপনিবেশিক যুগ ও আঠারো শতকের উপন্যাস
প্রথম আমেরিকান উপন্যাসগুলো ইউরোপীয় প্রভাব দ্বারা গঠিত হলেও এগুলো আমেরিকান সমাজের বাস্তবতাকে তুলে ধরতে শুরু করে।
গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও উপন্যাস
স্যামুয়েল রিচার্ডসন ও হেনরি ফিল্ডিং: ইংরেজ ঔপন্যাসিকদের কাজ আমেরিকান সাহিত্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
চার্লস ব্রকডেন ব্রাউন: তাঁর Wieland (1798) উপন্যাস গথিক শৈলীতে লেখা এবং এটি আমেরিকান রহস্য ও সাইকোলজিক্যাল উপন্যাসের পূর্বসূরি।
(খ) উনিশ শতকের আমেরিকান উপন্যাস
এই সময় আমেরিকান সাহিত্য নিজস্ব পরিচয় গড়ে তোলে। মার্ক টোয়েন, হারম্যান মেলভিল এবং নাথানিয়েল হথর্নের মতো লেখকরা আমেরিকান অভিজ্ঞতা ও সমাজের বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলেন।
গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও তাঁদের কাজ
নাথানিয়েল হথর্ন (The Scarlet Letter, 1850): পিউরিটান সমাজের নৈতিকতা ও পাপ নিয়ে লেখা একটি ক্লাসিক উপন্যাস।
হারম্যান মেলভিল (Moby-Dick, 1851): গভীর দার্শনিক ভাবনার সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ।
মার্ক টোয়েন (The Adventures of Huckleberry Finn, 1884): আমেরিকান বাস্তববাদী উপন্যাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
(গ) বিশ শতকের উপন্যাস
এই সময়ে আমেরিকান সাহিত্য আরও জটিল ও বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে। মডার্নিজম, হারলেম রেনেসাঁ এবং পরবর্তীতে পোস্টমডার্নিজমের প্রভাব উপন্যাসে পড়ে।
মডার্নিস্ট উপন্যাস
এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড (The Great Gatsby, 1925): আমেরিকান ড্রিম ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে লেখা একটি বিখ্যাত উপন্যাস।
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (The Old Man and the Sea, 1952): সরল কিন্তু গভীর জীবনবোধ সম্পন্ন এক উপন্যাস।
উইলিয়াম ফকনার (The Sound and the Fury, 1929): মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও জটিল আখ্যান কাঠামোর জন্য বিখ্যাত।
হারলেম রেনেসাঁর উপন্যাস
জোরা নিলে হার্সটন (Their Eyes Were Watching God, 1937): আফ্রিকান-আমেরিকান নারীর অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস।
(ঘ) আধুনিক ও সমকালীন আমেরিকান উপন্যাস
বিশ শতকের শেষভাগ ও একবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকান উপন্যাস বৈচিত্র্যময় ও নতুন নতুন বিষয়বস্তু নিয়ে এসেছে।
গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক ও সমকালীন লেখক
টোনি মরিসন (Beloved, 1987): দাসত্ব ও আফ্রিকান-আমেরিকান অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা এক শক্তিশালী উপন্যাস।
ডন ডেলিলো (White Noise, 1985): ভোক্তাবাদী সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রভাব নিয়ে লেখা।
কাজুও ইশিগুরো (Never Let Me Go, 2005): বিজ্ঞান কল্পকাহিনির ছোঁয়া যুক্ত উপন্যাস।
উপসংহার
আমেরিকান উপন্যাস সময়ের সাথে বদলেছে এবং নতুন নতুন শৈলী ও বিষয়বস্তুর সংযোজন ঘটেছে। এটি শুধু আমেরিকান সমাজের প্রতিচিত্র নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।